সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

স্বাধীনতা

ক্ষুধার্তের স্বাধীনতা পেট ভরা খাদ্য,
ভরপেট খানা পেলে বাজে সুখ বাদ্য।
তৃষ্ণার্তের স্বাধীনতা জল চাই মুখে-
অন্ধজনে স্বাধীনতা দৃষ্টি দাও চোখে।

মায়ের স্বাধীনতা সাজানো রান্নাঘর-
বাবার স্বাধীনতা দুচালা টিনের ঘর।
পাখির স্বাধীনতা ফুড়ুৎ উড়াল দেয়া,
খুকুর স্বাধীনতা হাতে চিড়ার মোয়া।

পথের স্বাধীনতা একাকী বয়ে চলা,
পায়ের স্বাধীনতা ইচ্ছেধীন পা ফেলা।
দৃষ্টির স্বাধীনতা বিশাল আকাশটা,
শরতের স্বাধীনতা ফুটন্ত কাশ টা!

কথার স্বাধীনতা সত্য বলতে পারা,
ব্যথার স্বাধীনতা বিষাদে আত্মহারা।
ফুলের স্বাধীনতা নীরবে ফুটে উঠা,
ভুলের স্বাধীনতা অভ্রান্ত চিলেকোঠা।

চোখের স্বাধীনতা হঠাৎ পলক ফেলা,
মুখের স্বাধীনতা মুখোশ খোলামেলা।
সূর্যের স্বাধীনতা জ্বলন্ত রোদ্র তেজ,
হাওয়ার স্বাধীনতা সহজে সতেজ।

বিড়ালের স্বাধীনতা ইঁদুর ছানা ধরা,
ইঁদুরের স্বাধীনতা দাঁতে কেটে মরা।
দেয়ালের স্বাধীনতা কান পেতে থাকা,
শিল্পীর স্বাধীনতা মরমে ছবি আঁকা।

কবির স্বাধীনতা শব্দের দোলাচল-
পাঠকের স্বাধীনতা পাঠান্তে মনোবল।
ছবির স্বাধীনতা নিজেকে তুলে ধরা,
বন্যার স্বাধীনতা জাগিয়ে তুলা খরা।

মেঘের স্বাধীনতা বেগবান প্রত্যাশা-
আগের স্বাধীনতা এখন কোণঠাসা।
পরের স্বাধীনতা ক্রমশ মূল্যহীন-
ঘরের স্বাধীনতা অস্থির দিনে দিন।

চেতনার স্বাধীনতা দ্যোতনায় মগ্ন,
কালের স্বাধীনতা চলমান এ লগ্ন।
আঙুলের স্বাধীনতা যা ইচ্ছে লিখা-
শৈশবের স্বাধীনতা আজো মধুমাখা।

মনের স্বাধীনতা মগ্নতা মেপে যায়,
ক্ষণের স্বাধীনতা সময়ে নাহি পায়।
জনের স্বাধীনতা লোকারণ্যে অস্থির-
দু'দণ্ডের স্বাধীনতা মায়ায় অধীর।

জলের স্বাধীনতা যদিও বয়ে চলা,
বলের স্বাধীনতা দুর্বল মেরে ফেলা।
তোমার স্বাধীনতা খুঁজছ গ্লানি-ক্লেশ,
আমার স্বাধীনতা সোনার বাংলাদেশ।

কালের লিখন​
ডিসেম্বর- ২০১৫

(স্বাধীনতার ৪৪ বছরে কালের লিখনের ৪৪ পঙক্তি।)

রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

থেকো তুমি

থেকো তুমি- যেভাবে হৃদয়ে বোধ আছে,
ফুলেরা যেভাবে- নিত্য দোলে গাছে গাছে।
যেভাবে পাখিরা উড়ে যায়, মুক্ত ডানা-
তুমিও যেও স্ব-ভাবে উড়ে, নেই মানা।

থেকো তুমি- প্রণয়ের মালা গেঁথে মনে,
সন্ধ্যার বৃষ্টিতে রবি ঠাকুরের গানে।
দুপুরের রোদে না হয় ছায়ার মতো-
হঠাৎ মিলিয়ে যেও, বেদনা আহত।

থেকো তুমি- শূন্য হাতের ভরা মুঠোতে,
একটা সমস্ত বিকেল- চিলেকোঠাতে।
পায়ে পায়ে মিলিয়ে যেও সন্ধ্যা এলেই-
চরাচরে অন্ধকার- শুধু তুমি নেই।

থেকো তুমি- হে অনাদি গভীর হৃদয়ে,
যতখানি থাকার কথা, থেকো নির্ভয়ে।

কালের লিখন​
ডিসেম্বর- ২০১৫

শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

বৃন্তচ্যুত

যেসব শীতের পাখি বছরান্তে প্রবাসে যায়,
পালক আর ঠোঁটে মাখে হাওয়ার কণা,
তুমি তাদের নিয়েই মগ্ন থেকো দিনমান-
আমার কথা ভুলেও আর জানতে চেওনা।

শরৎ মানেই আকাশ নীল, ভাবনা যাদের-
তাদের সাথেই সেলফি নিও কাশের বনে-
বিজ্ঞাপনে মগ্ন থেকো চুল চর্চার ফাঁকে ফাঁকে,
পাশবালিশে চুমোর দাগ, কার কে জানে?

কে জানে সেই বৃন্তচ্যুত পাতার খবর?
কোন শাখাতে প্রেমিক রেখে পথে লুটায়।
কারও কারও ঝরে যাওয়াই নির্ধারিত-
তবুও সখ্যতা জমে চুন আর পানের বোঁটায়।

তোমার আমার সখ্যতা, পাশাপাশি শব্দ-
সমান্তরাল ভাব প্রকাশে, আলাদা উপলব্ধ।

কালের লিখন
অক্টোবর- ২০১৫

প্রণয়কালীন

বহু বছরের রাত্রি শেষে দিন এলে,
আসবে কি সে আমার কাছে সূর্য ফেলে?
দিনের আলোয় মানুষজন তো কানা-
রাত্রি হলেই একা লাগে, নিঃস্ব দু'টানা।

রাতের ঘোরে একলা নীড়ে সঙ্গিহীন-
মানুষ ভাবে কাউকে পাবো এলে দিন।
দিন এলেই রোদের তাপে দিশেহারা-
অবিশ্বস্ত চোখে মুখে নীতির পাহারা।

প্রকাশ্যে সব মাতাল মানুষ, অনন্ত-
বেঁচে থাকার অভিনয়ে, নেই জীবন্ত।
অনেক আগেই মরে গেছে মৃতবোধ-
সূর্যস্নানে মগ্ন দিনে, নগ্ন প্রতিরোধ।

প্রীতি হয় অন্যটানে, বন্য মনে দায়-
দিন কিন্তু রাত্রি এলে সত্যি অসহায়।

কালের লিখন
অক্টোবর- ২০১৫

বিমর্শ পরামর্শ

মন খারাপ? উঠো- জল খাও এক গ্লাস-
বড় করে নাও কয়েকবার সত্যায়িত শ্বাস।
বেলুনের মতো চুপসে যাওয়া এই ক্ষণে-
বলো- স্থির হও মন, স্থির হও মন, দৃঢ়তা বুনে।

ঘরে থাকলে বাইরে তাকাও জানলা খোলে,
বাইরে থাকলে, ক্ষণিক গৃহস্থালি থাকো ভুলে।
ভাবনার ঘরে শাবল চালাও খুঁড়তে থাকো-
ভাবো পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্যপট, ভাবনা আঁকো।

আকাশ যদি না থাকে তো, মনের আকাশে-
কালো মেঘ বাছাই করো, যার রঙটা ফ্যাঁকাসে।
কিম্বা নিজের আঙ্গুল গুনতে পারো নিষ্ঠা ভরে-
ক'বার জীবন থমকে ছিলো আবেগি অনাদরে।

যদি কোনকিছুই না পারে, কাটাতে মনের মেঘ-
বাথরুমে যাও কল ছেড়ে দাও, ঝরে যাক উদ্বেগ।

কালের লিখন​
অক্টোবর- ২০১৫

জিজ্ঞাসা

কেমন যাচ্ছে তোমার দিনরাত? সময়?
এ শুধুই জানতে চাওয়া, অন্যকিছু নয়।
বলা না বলা সমান, জানি জীবন চলমান-
কোন কিছুই স্থির নয়, সুখ বা ব্যথার দান।

কিভাবে কোথায় ছিলে, বিগত বছরগুলো-
কোন কোন পথে হেঁটে, পায়ে লেগেছে নষ্টধুলো।
চাইলেই বলতেই পারো, সন্ধ্যায় কেমন ছিলে-
রাতের খবর পায়নি মানুষ, তীব্র আলো জ্বেলে।

মানুষ পড়তে পারে না, অন্য মানুষের মুখও-
কি হবে জেনে? কোথায় তুমি কেমন থাকো।
ক'দিন আগে জ্বর ছেড়েছে, বুকের পাশে ব্যথা-
থাকনা ওসব নৈমত্তিক আলাপ, কথার কথা।

তুমি শুধু এটুকু বলো- ছোট্ট কুশল জবাব,
জীবনে কি আছে তোমার, এখনো আমার অভাব?

কালের লিখন​
অক্টোবর- ২০১৫

কালো বর্ণ

দেশটা এখন খুনিদের,
দেশটা এখন আমার না।
অরাজকতা চলছে শুধু,
কিছুতেই এ থামার না।

পাখির মতো মানুষ মরে
বিচার এখন প্রহসন।
ক'দিন পর সব চুপচাপ-
বড় বুলি মিথ্যে ভাষণ।

কার লাভে? কে মরে
কি লাভ এসব খুনে?
উল্টো পথে চলছে দেশ
কে কার কথা শোনে।

এটাই সত্য মরেনা তথ্য,
আছে বর্ণে আঁকা কাল।
খুনির হাতের রক্তকণা,
হবেনা নিশ্চিত জঞ্জাল।

রক্তে এসেছে বর্ণমালা-
রক্তে এসেছে স্বাধীনতা।
কষ্ট এই- আজও লিখতে হয়
বর্ণ দিয়েই রক্তের কথা।

কালের লিখন​
অক্টোবর- ২০১৫

ক্ষুধাময় ঢেউ

ক্ষুধার নাম জ্বলন্ত আগুন, জ্বলতে
থাকে ধিকিধিকি পেটে, টলতে টলতে
হঠাৎ মূর্ছা যায়, যদি খাদ্য না জুটে।
খাদ্য জীবনের বাদ্য, চাই করপুটে।

ক্ষুধার কাছে খোদাও নস্যি বোদ্ধামত,
খাদ্যের জন্য আদি লড়াই এ যাবত।
অস্ত্র বলো অগ্নি বলো, যত আবিস্কার,
ক্ষুধার তাড়না কেউ কারোনা, শিকার।

কবি খায় চাঁদ গিলে, ছবি খায় স্মৃতি-
বক্তব্য গিলে খায়, অহেতুক উদ্ধৃতি।
বড় প্রাণী গিলে খায়, ছোট ছোট প্রাণী,
ক্ষুধার কাছে বন্দী সবাই সত্য জানি।

একে মেরে ও খাচ্ছে, ওকে মারছে কেউ,
খানা খাদ্য বাজে বাদ্য, ক্ষুধাময় ঢেউ।

কালের লিখন​
সেপ্টেম্বর- ২০১৫

কাম্য সাম্য

দাদা দিদি ভাইয়া আপু শুধুই ডাক-
সব কিছুতে মত বিভেদ দূরে যাক।
তোমার শিরায় যে রক্ত প্রবাহমান-
অন্য দেহে একই ব্যপার সম তান।

জল বলো পানি বলো কিম্বা ওয়াটার-
ক্লান্তি ক্ষুধা প্রত্যাশা একই কারবার।
নাম হয়তো মোঃ আলী কিম্বা হরি দাস
দুই মানুষ এক বাতাসে নিচ্ছে শ্বাস।

নজরুল গেয়ে গেছে সাম্যের গান-
এক বৃন্তে দুই ফুল হিন্দু মুসলমান।
লালন বাঁধলো অপূর্ব মানব গান-
খৎনাতে মুসলিম- নারীর কি বিধান?

কবরে চিতায়, ফিতার মাপ নেই কোনো-
মাটিতে বিনাশ পরম সত্য এই জেনো।
এটুকু জেনো কোনো মতবাদ স্থায়ী নয়-
তবে কেন মতের কাছে মানুষের ক্ষয়?

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

স্বতন্ত্র পঞ্চবিন্যাস

আকাশকে একটা ব্যক্তিগত ডায়রি ভেবে-
বহুকাল বলে গেছি নিজের বারোয়ারী কথা।
যেদিন আর বলার মতো কোন কথা নেই,
সেদিন আবিস্কার করলাম- আমার একান্ত
আকাশটা ঠিক আমার নয়, সে অনেকের।

শৈশবে যে কবিতা গোপনে আত্মস্থ করেছি-
ভেবেছি আর কেউ পায়নি এর পাঠতৃপ্তি।
বড় হতে হতে, জীবনের পথে পথে ঘুরে
একদিন আবিস্কার করলাম- সেই কবিতা
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ বুকে লালন করে।

আমি একটি স্বতন্ত্র আকাশ এবং কবিতা,
একজোড়া নির্মল চোখ আর সন্ধানী পা নিয়ে-
হেমন্তের ধানক্ষেতে দেখেছি পতঙ্গের উচ্ছ্বাস,
বিকেলের লাল আলো আর সোনালি ধান
মিলেমিশে রক্তিম করেছে গোলাকার গ্রহ।

আমি সেই আকাশ আর কবিতাকে নিয়ে
দিনের পর দিন হেঁটেছি বৃক্ষের মহাসভায়।
মানুষের লালিত বিশ্বাস আর পালিত গৃহে
ফিরে আসতে আসতে আমি কান পেতে শুনেছি
ঘরের সমস্ত কাঠের আসবাব শ্লোগান মুখর।

মরা কাঠের আদ্রতা, ঝরা পালকের মতো,
বুকের কার্নিশে ঝুলিয়ে রেখে দেখেছি-
ক্ষুধার সময় মানুষ আর পশুতে প্রভেদ নাই।
তৎক্ষণাৎ আবিস্কার করলাম- আকাশ আর
লালিত কবিতার যোগসুত্র। মূলত অনুভব স্বতন্ত্র।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

খাতা- কলম

গোপন বাণিজ্যে গিয়ে আপন তোমাকে
প্রথম পছন্দেই কিনে এনেছিলাম। যেন-
অনেক প্রত্যাশিত কিছু মুহূর্তেই পেলাম।
ঘরে এনে দিনে দিনে সখ্যতা বাড়লো
চক্রবৃদ্ধি হারে। শুধু মুগ্ধতার সময়গুলো
একান্তেই পড়ে থাকলো দূরে অনাদরে।

তুমি আমার ভালোবাসার চারু খাতা-
কিচ্ছুই লেখা হয়নি, সাদা এখনো পাতা।

এবার একটা কলম চাই যে আমার,
ভাবছো- এখনি সময় হয়েছে থামার?
না লেখাই না বলাই বড় স্বস্থির কাজ।
চারপাশে হায়েনার আওয়াজ, সত্য বলা
সঠিক চলা বারণ, করো নীতি আর
নৈতিকতাহীন পশুর জীবন ধারণ।

আঙুল কেঁপে উঠে- বুঝতে পারি কোথাও ভুল,
জানি- পৃথিবীর প্রথম কলম মানুষের আঙুল।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

অতিক্রম

কবিতা তোমাকে নিশ্চিত
পতনের দিকে নিয়ে যাবে,
দোহাই কবি, এঁকোনা শব্দের ছবি,
তুলে রাখো অযাচিত শব্দের ঝলক। 
ভীষণ অস্থিরতায় দুলছে এই
পৃথিবী নামক মায়াবী দোলক।

এক একটা কবিতা-
তোমার না খাওয়া মুহূর্তের মতো-
তুমুল তৃষ্ণা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
অক্ষরের টুটি চেপে ধরে।
তুমি শব্দের সাথে সখ্যতা বাদ দিয়ে
কোন উঁচু দালানের ছাঁদে উঠে,
চাঁদ আর পৃথিবীর দূরত্ব মাপতে থাকো-
ততক্ষণে বুড়ো পৃথিবী পেরিয়ে যাক,
ক্ষুধা আর দারিদ্রতার সাঁকো।

কালের লিখন​
অক্টোবর- ২০১৫

আমিময় আমিত্ব

দাঁড়াও় একবার শুনি-
এই জগতে সবাই কেন, নিজেকে ভাবে জ্ঞানী?
সবাই কেন নিজের মতটাই সঠিক করে ভাবে-
নিজের অভাব সবচে বড়, অন্যেরা নেই অনুভবে।

আমি আমি আমি-
সবাই কেমন আমার আমার করছে দিবস- যামী।
মূল কথা- কেউ পায়নি অদ্যাবদী আমির খোঁজ,
সকাল সন্ধ্যা অলীক ধান্দা নিজেকেই ভাবে রোজ।

ভাবছে আপন পথ-
সবাই মানুষ হয়েও ভুলে যাচ্ছে, মানবিক শপথ।
ভুলে যাচ্ছে ন্যায় নীতি, হৃদয়ের কোমল প্রীতি-
মানুষ এখন ভাসছে শুধুই, নাই স্থায়িত্ব স্থিতি।

এদিক ওদিক ঘুরে-
যে কে সেই। মুখ থুবড়িয়ে পড়ে আছে আস্তাকুঁড়ে।
রাতের আঁধার চষে, দিন শেষে অতৃপ্ত ভগ্ন তনুমন,
যেন নিজের হাতে নিজেই করেছে অন্তিম আয়োজন।

স্ব মানেই আজ স্বার্থ-
তবুও মানুষ নিজের কাছেই সবচেয়ে বেশী ব্যর্থ।

কালের লিখন
অক্টোবর- ২০১৫

পথের রাণী

ঘর নেই পর নেই সবাই আপন,
ঘুরে ফিরে পথে পথে জীবন যাপন।
ছায়া রোদ মরা বোধ ভাবনা বিলাস,
মেয়েটা পথের রাণী, শুনি ফিসফাস।

ভাব আছে ক্লিষ্ট মুখে, চিন্তার দহন,
পড়ে নাই সমরেশের সাত কাহন।
পাঠ্যক্রম পড়ে নাই ভ্রমে বেলা যায়-
দমে দমে বেঁচে আছে জীবনের দায়।

গাছ পালা নদীনালা সহজ জীবন
হাতে হাতে জীবনের ভুল বিজ্ঞাপন।
পথে পথে মরে যায় শত শত লোক-
দু'দণ্ড পালন হয় বারোয়ারী শোক।

এসবে যায়না কিছু, আসেও না তার-
ভাবনা দুই মুঠো আহার যোগাবার।
দুই হাতে ফুল ধরে ভুল রাজপথে-
কিভাবে সে কার, আঙুলে আঙুল গাঁথে?

কোথাও সে ঘুরে আসে শীতল বাতাস,
শরীরে শরীর মিশে, হয় কারো গ্রাস।
আবার সে ফিরে আসে পথের ডাকেই-
কত নামে ডাকে তাকে আজো অনেকেই।

পরম সত্য এই-
মেয়েটা পথের রানী। ডাকনাম নেই।

কালের লিখন​

শীতকালীন

এই শীতে তোর চাদরের
অর্ধেকটা আমাকে দিস।
চাইলে খানিক উষ্ণতা ধার
তুইও নিতে পারিস।

গা ঘেঁষে বসতে পারিস
বিড়াল ছানার মতো।
বলতে পারিস মনের কথা
জমানো আছে যতো। 

হেমন্তে তুই কোথায় ছিলি?
শীত আসার আগে।
কার সাথে কার্তিকের রোদ
মেখেছিস অনুরাগে।

এসব কথা শুনতে চাইনা
আগুনের দিকে চেয়ে।
জানতে চাইনা কি ভাবনা
তোর আমাকে নিয়ে।

এক চাদরের নিচে আসিস
এবার শীতের কালে।
অনেক তো বেঁধেছিস বাসা
এ ডালে ও ডালে।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

প্রস্থান

একদিন খুব যত্ন করে ধরে রাখা,
হাতের মুঠোফোনটিও বুঝতে পারবেনা,
ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে গেছে স্নায়ুতন্ত্র,
নিশ্চল, নিশ্চুপ, নিথর হয়েছে দেহযন্ত্র!
বন্ধ হয়ে গেছে অনু পরমাণুর ঘর্ষণে সৃষ্ট বিদ্যুৎ শক্তি,
যাকে অনন্তকাল আত্মার বিভাজনে দিয়ে এসেছি ভক্তি।

কেউ একজন ঝরে গেছে, তাতে কী?
তখনো ঘাসের ডগায় শিশিরকনা
উন্মুখ হয়ে আছে, রোদ্রতাপে বাষ্প হয়ে
আকাশ মুখী প্রেমে। গঞ্জে গ্রামে-
খুব ভোরে তখনো বকুল সৌরভ ছড়াবে,
গায়ের মেয়ে, চকিতে চেয়ে, ফুল কুড়াবে,
তখনো পঁচা গলা এঁদো পথে, কোনমতে
সটান চলে যাবে
দু-একটা দু চাক্কার সাইকেল।
কেউ বুঝতেই পারবেনা, কেউ একজন নেই,
বন্ধ হয়ে গেছে মহাময় জীবনের আচানক খেল।

তখনো বাতাসে জলবায়ুর সংবাদ, ভূখণ্ডে ভূখণ্ডে,
দেশে দেশে শান্তির নামে অশান্ত যুদ্ধের দামামা,
খালি পেটের মানুষ হয়েছে গেটের কাছে বিদ্রোহী,
ভিতরে হিমশীতল হাওয়ায় উড়ে সভ্যতার উঠানামা।

তখনো ঘরে আলো নেই, মেঘেরা যাচ্ছে কোথাও,
রাত্রির দিকে ধেয়ে যাচ্ছে ক্রমশ মায়াবী বিকাল,
সবুজ লাল পতাকা গায়ে, ন্যুব্জ জীবনের দায়ে
হেঁটে যাচ্ছে বিরামহীন অন্ধকারে অনন্ত মহাকাল।

তখনো গণতন্ত্র, মানবযন্ত্র, ভাবনা ভ্রান্ত- সকলে
তালগোল পাকিয়ে চক্কর খাচ্ছে চেতনার চারপাশ,
হিসেব নিকেশ গ্লানি আর ক্লেশ, আশার বীজে
তখনো চলছে সুজলা ভুমিতে ফসলের চাষবাস।

চাঁদের কণা, প্রেয়সী মুনা, ঠাণ্ডা জল, দখিন হাওয়া,
ঘর সংসার, দোকান বাজার, কর্মহাজার, সব চলমান,
তখনো বাউল, খুলে এলো চুল, ভুলের নামে নতুন
ভুলে, শোকের দিনে গলা ছেড়ে গাইছে প্রেমের গান।

তখনো সবাই দৌড়ে আছে,
ফুল আর ফল গাছে গাছে,
একটি ফুলের ঝরে যাওয়ার দিনে,
ছলছলানি নেই কারো আর মনে,
ঝরা- পড়ায়, মন নেই কারো আর,
আলোয় বসে খুঁজছে সবাই নিটোল অন্ধকার।

খুব সকালে প্রাতভ্রমণ, সন্ধ্যে বেলায় দূরে কোথাও
হুইসেল বাজে, কানের কাছে বাজে কালের বেল।
কেউ বুঝতেই পারলোনা, কেউ একজন নেই,
বন্ধ হয়ে গেলো মহাময় জীবনের আচানক খেল।

ক্রমশ ফুরিয়ে আসা অম্লজানের ন্যায্য হিস্যা,
কেউ একজন ছেড়ে দিয়েছে, কারো ফুরিয়েছে-
অপরূপ আলো ঝলমলে ধরিত্রীর রুপ-রস-গন্ধ-স্বাদ।
একদিন জানবে কেউ কেউ, মরে গেছে মরা অপবাদ।

কালের লিখন

প্রশ্ন

একটা বই পড়ছি।
বইটা একজন লেখক লিখেছে
এবং প্রকাশ করেছে প্রকাশক।
আমিই একমাত্র পাঠক।

একটা বই পড়ছি...
বইটার কোন নাম নেই।

বইয়ে আছে অনেক শব্দ,
তাতে নানান উপলব্ধ।
পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় অনুভব।
আছে অক্ষরের কলরব।

অধ্যায়গুলো গতিময় ভীষণ-
ভাবছো- বইটার নাম জীবন?

কালের লিখন​ 
নভেম্বর- ২০১৫

গার্হস্থ

বহুদিনের ঘোর কাটেনি এখনো আমার,
মগজে প্রোথিত আমাদের প্রেম খামার।
শীতলপাটিতে বসে চিতল মাছের ঝোল,
আণ্ডা বাচ্চার সাথে আধো আধো বোল।

কালের লিখন​

চলে গেছে একজন

চলো রাস্তায় নামি, ঘর ছেড়ে দাও,
পথের বুকে পায়ের আঘাত হোক।
চলো হই আকাশের নিচে মগ্ন উধাও-
জমিন জুড়ে উৎসব, মরে যাক শোক।

চলো নেমে যাই ক্রমশ উঁচু থেকে নিচে,
নিচু হয়ে খুঁটে খাই খাদ্য- থাকি বেঁচে।
চলো বেঁচে থাকার নামেই যাই নেচে,
জীবনের পেয়ালা ভরি সমুদ্দুর সেঁচে।

চলো চোখে মুখে আশাবাদ মেখে নেই,
নৈরাশ্য হারিয়ে ফেলুক হীন ভারসাম্য।
চলো কামনায় মুখ্য করি শুধু প্রেমকেই-
প্রেম হোক মানবিক, মধুময় কাম্য।

চলো বলে ফেলি সেই কথা আস্তে ধীরে।
চলে গেছে একজন। যে আসেনি ফিরে...

কালের লিখন​
আগস্ট- ২০১৫

ছায়া স্মৃতি

জন্মের পর অনেকদিন কোন
নাম ছিলো না আমার।
পড়শিরা হয়তো বাবু বাবু করতো।
মা কি ডাকতো জানিনা, মনে
নেই বাবার কথাও, শুধু
এটুকু মনে আনতে চেষ্টা করি
আমাকে তাঁরা ভালোবাসা ভাবতো,
হৃদয়ের উত্তাপে প্রতিক্ষণ মাপতো।

আমি কি ভাবতাম- তা একান্তই
শিশুকালীন ভাবনা। মনে নেই।
অনেক কিছুই মনে নেই আজকাল,
আবার মনেও আছে অনেক কিছু।
যেমন- বাবার আঙুল প্রিয় ছিলো ভীষণ,
মায়ের স্তনের বোঁটা। যদিও
সময়ের হিসেব ছিলো না, তবুও
জানি প্রিয় সময় ছিলো দুপুর বারো'টা।

তখন মধ্যদুপুর। সূর্য পৃথিবীকে
সবটুকু ভালোবেসে উত্তাপ দিতো।
রোদে পুড়ে পুড়ে যেমন শক্ত হয়েছে,
বসবাসের উপযোগী এই তরল ধরিত্রী।
আমিও একতাল কাদা থেকে, বাঁধা পেরিয়ে
মায়ের বুকের উষ্ণতায় দিন দিন বেড়ে উঠেছি।
এখনো চোখে ভাসে লক্ষপাতার তেঁতুল গাছের
জন্মকালীন ছোট ছোট দুইটি পাতা।
অযথাই মনে পড়ে এইসব, যথাযথ অজস্র কথা।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

রাত্রিকালীন

নেমে এসো ঘনরাত, পাঠ্য ধারাপাত-
চলো বন কেটে সবুজে আগুন জ্বালি।
অন্ধ ঘামে ভিজে মুখ। দুই সারি দাত
আলোহীন সাজানো রাতের গৃহস্থালি।

এখানে আলো নেই এখানে ভালো নেই
এখানে না থাকাটাই পরম উপস্থিতি।
এখানে দেখা নেই এখানে লেখা নেই-
এখানে মুখ্য শুধুই তেল ভরা বাতি।

আঁখিপাতে এই রাত এই ঘন শ্বাস-
আঁধারে স্থির থাকে অন্ধকারের মতো।
এই ক্ষণে মনো মনে বিশ্বাসী সন্ত্রাস,
খুঁচিয়ে আগলা করে অহেতুক ক্ষতো।

তবুও রাত চাই। অন্ধকারের আলো-
রাত ছাড়া দিনটা ভীষণ এলোমেলো।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

অমরকাব্য

এখনো আমরা সেখানেই আছি থেমে,
যেখানে প্রথম হিসেব হয়েছিলো-
প্রথম আমরা- কে পড়লাম কার প্রেমে?

হঠাৎ মহাকালের গর্ভ হতে বিচ্ছেদ এলো নেমে,
কালের পৃষ্ঠায় অমরকাব্য তোমার আমার নামে।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

প্রেমশীত

শীত আসবে ভাবতেই
কেমন শিরশিরে অনুভূতি
দাঁতে দাঁতে ঠুকা লাগার শীতল শিহরণ।

প্রেম আসবে ভাবতেই
কেমন আনমনা অবসাদ
শুধুই ভয়, আবার যদি হারায় এই মন।

তুমি আসবে ভাবতেই
কেমন আনন্দঘন উচ্ছ্বাস
প্রেম-শীত মিলে মিশে উষ্ণতায় অবগাহন।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

জল সংক্রান্ত

ঘাট নাই, নাই জল,
নেই জলজ ছলছল-
কোথাও নৌকা নাই, নদী মরে গেছে।
অলীক ভাবনা ভেবে নিত্য এ অনুভবে-
বেঁচে আছি জলপ্রেমী, সব জলপথ মুছে।

"মা যদি হয় রাজি,
বড় হয়ে আমি হবো
খেয়া ঘাটের মাঝি" কোথায় সে দিন আজি।
মানুষ এখন আকাশপথে পাখির মতোন-
চন্দ্রজয়ী মানুষ ধরেছে, মঙ্গলের পথে বাজি।

শিল্পীর আঁকা ছবিতে, 
হারানো দিনের সংগীতে
মাঝি থাকে, থাকে নৌকাসহ খেয়া ঘাট।
গতকাল হয়ে যায় আগামীকালের ইতিহাস,
পাঠ্য বইয়ে পড়তে থাকি, ভ্রান্ত কোন পাঠ।

কালের নায়ে বৈঠা হাতে মনোগাঙের মাঝি-
ঢেউয়ের দোলায় দোল খাচ্ছি, জলতেষ্টা আজি।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

ব্যাখ্যাহীন রাত্রদিন

একটু ঘুম চাই, বহুদিন ঘুম নেই চোখে,
কিছু সুখ চাই, জন্মহতে মরে আছি দুখে।
বহুদিন মনের কোণে নাই কোন প্রশান্তি-
ক্ষণে ক্ষণে যাতনাকাল, মুহূর্তেই অশান্তি।

শুনতে খারাপ শুনায়, তবুও সত্য এই-
প্রোথিত জীবনে কোন প্রাপ্তিযোগ নেই।
শুধুই হারিয়ে গেছে, সুতোকাঁটা ঘুড়ি-
তাই বেদনার তুলো হয়ে হতাশে উড়ি।

কোথাও বাতাস নেই শ্বাস নিতে কষ্ট,
পথ আছে হাটছি, যদিও জানি পথভ্রষ্ট।
হয়তো বলবে কেউ তুষ্ট থাকো তুমি-
কি নিয়ে তুষ্ট হবো? নেই দাঁড়াবার ভুমি।

নেই সেই মুখ। যেই মুখে সরলতা আছে,
সটান বৃক্ষ স্থির, অজস্র পরগাছা গাছে।
দু'পা সামনে গেলেই অজস্র নতুন পথে-
কিছুতেই পাইনা দিশ, আছি বড় সংঘাতে।

প্রাতে উঠি রাতে উঠি, অসময়ে একা ছুটি
ঘুম নেই, নেই ঘুম।  নির্ঘুম এই আঁখিদু'টি।
চিরকালীন ঘুমের আগে কিছুটা ঘুম পেলে-
একটু পালানো যেতো, জীবনের গ্লানি ফেলে।

নষ্ট স্মৃতি মেলে, অহেতুক কোলাহলে মেতে-
অযথাই জেগে আছি ব্যাখাহীন দিনে- রাতে।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

শৃঙ্খলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা

একটা রাতের গল্প বলতে গেলেই দিন এসে হয় স্থির,
মুখের বর্ণনা দিতে গেলেই, দেখি শুধু মুখোশের ভিড়।
চোখের কথা বলতে গেলেই, দৃষ্টিজুড়ে মিষ্টি ছায়াছবি-
জীবনের কথা বলতে গেলেই, যন্ত্রণার কাব্য লিখে কবি।

বলতে গেলে- সঠিক কথা, বেঠিক পথিক চাটি মারে-
মানুষের কথা বলবো কি আর? মরে যাচ্ছে অনাদরে।
ভাবছ বুঝি চলছে এখন দহন কালের খরা, আরে না-
জীবনের ভিন্নপাঠ অন্য আয়নায়, আপোষ জানে না।

দুর্ঘটনার আদ্যপান্ত কেউ জানেনা, ঘটনা কেমন করে,
হিসেবি মন তবু অকারণ, হিসাব মিলায় শুন্যের ঘরে।
একের কথা বলতে গেলেই, দশজনের প্রসঙ্গ ঘুরে আসে-
যদিও ইতিহাস বলে- মানুষ নিয়ত ভুলতেই ভালোবাসে।

রাতের কথা দিন ভুলে যায়, দিনের কথা ভুলে রাত-
নতুন দাঁত গজায় যখন, তখন মূল্যহীন হয় দুধদাঁত।
সূর্যের আলোর দেনা ভুলে, চন্দ্ররানীর মধু জোসনা-
কার কথা কে মনে রাখে? নিজেকে নিয়ে মূল বাসনা।

দিব্যি কমে আসে ব্যথার দহন, সময় এমন জাদুজানে-
কত মানুষের কবর হচ্ছে, খবর নিও বুকের গোরস্থানে।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

মৌ মগ্নতা

তুমি ছায়ার সাথে সখ্যতা করতে করতে
আলোর বিপরীতে দাঁড়িয়েছ বারবার।
আমি আলোর প্রেমে মগ্ন হয়ে অসংখ্যবার-
শুধু তোমাকেই দেখেছি হে ছায়াবৃত্তের শরীর।
আমার দৃষ্টিতে ছড়ানো ছিলো তুমিময় ভিড়। 

আমি তোমাকে দেখেছি সকালের প্রথম রোদে,
মিলেমিশে ছিলে তুমি, তপ্ত দুপুরের বোধে।
বিকেলের আকাল ভুলে সন্ধ্যের আঁধার এলে-
আমি তোমাতেই ফিরে গেছি, অন্ধকারে পথ ভুলে।
তুমি সাদৃশ্য খুঁজেছ শুধু রাত আর কালোচুলে।

দিন প্রকাশ্য, একথা সবাই জানে, শুধু রাত-
এক গোপন আততায়ী, অন্ধকারে অচেনা নিজের হাত।
আলো ছাড়া মুহূর্তে অচেনা লাগে চিরচেনা ভুমণ্ডল,
আমি তোমাকেই চিনতে চেয়েছি, আঁধার আয়তনে।
তুমি অলীক কথার মালা গেঁথেছ, যান্ত্রিক যতনে।

রাতের পাঠ অসমাপ্ত রেখেই, বহুদিন পৃথিবীতে
উঠে গেছে সকালের সূর্য। অনেক স্বপ্নই হঠাৎ
ভেঙ্গে গেছে রোদের আঁচে। দিনের মানুষ পুতুল নাচে।
প্রখর সূর্যালোকে সং সেজে, নিজের পরোক্ষ অস্তিত্ব যাচে।
তুমি তখনো প্রশ্ন করো- তবে মানুষ কেন বাঁচে? 

মানুষ কেন বাঁচে? এই প্রশ্ন মাথায় নিয়ে দিব্যি বেঁচে আছে
পৃথিবীর সমস্ত জীবিত মানুষ। মৃত মানুষ বুঝে নিয়েছে
জমিনে তার যতটুকু অধিকার। শুধু তুমি আমি-
পৃথিবীর প্রথম জুটির মতো ত্রুটি নিয়ে বেঁচে আছি-
শুনেছি- মধুর মিষ্টতার খবর রাখেনা মৌমাছি।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

ভোতা অনুভব

তখন সবে সন্ধ্যে নেমেছে, যখন তুমি এলে-
সারাদিনের সমস্ত কাজে কিছুটা বিরতি দিলে।
আমি বললাম চা খাবে নাকি? চিনি কম।
তুমি বললে- জিরিয়ে নেই, একটু ফেলি দম। 

সেই কোন সকালে ঘুম ভেঙ্গেছে রোদের আঁচে-
সারাদিন নিজের ছায়া ধারণ করে গেলাম নেচে।
অপেক্ষায় ছিলাম কখন আসবে অন্ধ আঁধার-
অন্ধকারের রাতটুকুই তো সময় জিরিয়ে নেবার।

আমি বললাম- শুনবে কিছু? তুমি বললে না-
সারাদিনের কোলাহলে কানে এখন শূন্য সীমানা।
কিছু শুনতে ভাল্লাগেনা, সন্ধ্যা হলেই কেমন লাগে-
একটু আঁধার দেখতে দাও প্লিজ, অন্ধ অনুরাগে।

দিনটা বড্ড সেকেলে লাগে ইদানীং, বড় নির্জীব-
বাস্তবতা চাখতে চাখতে অনুভূতিহীন ভোতা জিব।

কালের লিখন​ 
নভেম্বর- ২০১৫

আর্তনাদ

অসম্ভবের দুয়ারে কড়া নেড়ে গেছি,
চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে ছিলো সম্ভাবনা।
অসাধারণ প্রত্যয় নিয়ে পথ হেঁটেছি,
কিছু সাধারণ অনুভূতি দিয়েছে দ্যোতনা।

তবুও একটু একটু বিষাদ জমিয়ে মনে-
প্রসাদ লাভের আশায় থাকি সাধন বিনোদনে।

কালের লিখন 

ব্যর্থতা মানুষগামী

মানুষ ব্যর্থ হয়না ব্যর্থ হয় ক্ষণ,
মুহূর্ত পাল্টে গেলেই শুভ আয়োজন।
তবুও ব্যর্থ কেন মানুষকেই বলি?
চেতনায় ঝুলে থাকে বেদনা অঞ্জলি।

টান দাও, চলো ছিঁড়ে ফেলি প্রহেলিকা-
ক্রমশ আন্ধারে জ্বলুক আলোক শিখা।
ঝেড়ে মুছে সংস্কার তাকাও সিদেচোখে-
ব্যর্থতার ছায়া, লুপ্ত হোক মনে মুখে।

প্রসন্ন করো মন আসন্ন এ আঁধারে,
চলে যাবে ক্ষণ, আলো পাবে খেয়াপারে।
সময়ের করাঘাত তোমার শরীরে-
কেন কর চুম্বন? ব্যর্থতা নত শীরে?

পাল্টাও ক্ষণে ক্ষণে, অব্যর্থ মনে তুমি,
মানুষ ব্যর্থ না, ব্যর্থতা মানুষগামী।

কালের লিখন

অবিস্মৃত অন্ধকার

তোমাকে মনে পড়ে—
কিন্তু মনও আজ অন্য কোথাও পরে আছে।
একদিন এক ফুলে মধু খেয়েছিলাম-
হঠাৎ জীবন ফিরে এসেছিলো, ফলদায়ী গাছে। 

তোমাকে মনে পড়ে—
স্পষ্ট মনে পড়ে, একদম মনে পড়ার মতোই।
যেন আমরা দু'জন জোড় সেলাই-
পাশাপাশি দৃশ্যমান একই রঙের সুতোয়। 

তোমাকে মনে পড়ে—
হুটহাট মনে পড়াও আজকাল নিয়মমাফিক।
বার মনে নেই, পহেলাপৌষ-
শেষ বাসে চলে গেলে, ছিলো না অযথা ট্রাফিক।

তোমাকে মনে পড়ে—
যখন খুব করে কুয়াশা ঘন। উষ্ণতা নেই চাদরে।
বোধটা কেমন রোদ তৃষ্ণায় নাচে-
অসময় দারুণ কাঁপায়, খুঁড়িয়ে বাঁচি বাজারদরে।

তোমাকে ভীষণ মনে পড়ে...
অনেক সময় পেরিয়ে এসেও অবিস্মৃত অন্ধকারে।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

আশাহত

বলেছিলাম একটা নিজস্ব নাম দিও আমার,
যে নামে আমি বিকশিত হবো তোমার অন্তরে।
জল দিও বল দিও, দিতে বলেছিলাম মন-
কিছুই দিলে না, এখনো নাম পাইনি, অনামি জীবন। 

বলেছিলাম শেষ কথা বলে যেও মনে করে,
গুচ্ছ শব্দমালায় যতনে দিও অনেক ভাবনা ভরে।
ভয় দিও ক্ষয় দিও, দিতে বলেছিলাম কথা-
তুমি অকালেই নিশ্চুপ। যেন কবরের মতো নীরবতা।

বলেছিলাম একবার ডাক দিও ফিরবো ঠিক,
এক পথে যাবো দু'জন, নিশ্চিত করে পথের দিক।
দিশা দিও ভাষা দিও, দিতে বলেছিলাম ঠাঁই-
কিছুদূর হেটে এসে দেখি, একা পথিক, তুমি নাই। 

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

তুমি ভালো আছো জেনে

তুমি ভালো আছো জেনে,
ইলেকট্রিক ইঁদুরটা জীবন্ত হয়ে
হেঁটে হেঁটে চলে গেলো মনিটরের আড়ালে।
অসহায় আঙুল ফিরে এলো কিবোর্ডে,
তুমি ভালো আছো জেনে,
কথা বলা আঙুল আজ লিখতে শুরু করলো।
প্রথমেই লিখলো- ভালো আছে সে।
রোদের কাছে বার্তা এসেছে, বলেনি অভ্যাসে।

তুমি ভালো আছো জেনে,
জং ধরা মন কেমন চকচকে লোভাতুর।
একটানা বর্ষণের মতো ভেসে এলো জলজ সুর।
এলো নানা কথা মনোমনে,
তুমি ভালো আছো, তুমি ভালো আছো এই জেনে।

তুমি ভালো আছো, ভালো থাকার শপথে-
যদিও দু'জন হাঁটছি আজও আলাদা দু'পথে।

কালের লিখন​
আগস্ট- ২০১৫

উচ্চারণ

আজ প্যারিসে কাল আজিজে আক্রমণ-
অলীক নেশায় মগ্ন হয়ে মানুষ মারো।
মানুষ মারা মতবাদ, মানিনা আমি-
মাথা কাটলে নতুন মাথা জাগবে আরও।

রক্ত দিয়ে কি আঁকতে চাও? ঈশ্বরের মুখ!
মানুষের মুখ দেখেছ তুমি ভালো করে?
মানুষ হয়ে মানুষ মারা ধর্ম কিসের আবার,
আত্মঘাতী বোমা বাঁধো বোধের অন্ধকারে।

কিসের শোধে অন্য জীবন, অন্য জনের মত,
হরণ করতে উদ্ধত তুমি? কোন সে লোভে।
মানুষ হয়ে মানুষে প্রেম, জীবনের আনুগত্য!
এসব কিছু কি ধারন করেছ? মরা অনুভবে।

আজকে যাদের মারছ তুমি, দিয়ে ধর্মের দায়-
তারাই অমর। রক্ত দিয়ে কি সত্য মুছা যায়?

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

নিজস্ব বনসাই

মানুষ বড় নাকি ছোট এই তর্কে কাজ নাই,
শোনা যায় স্বপ্নের নাকি সীমা পরিসীমা নাই-
শুধু এটুকু জানি- আমার ইচ্ছেরা বনসাই। 

পথ আর পথিকের তর্কে কোন কাজ নাই-
এটুকুই সত্য, অনিশ্চিত পরিভ্রমণ পুরোটাই।
শুধু ইচ্ছেরা ডানা ভেঙ্গে হয় নির্মল বনসাই। 

সাধ আর সাধ্যের তর্কে গিয়ে কাজ নাই-
আমরা সকলেই যেন সাধ্যাতীত অযথাই।
যথাযথ ইচ্ছেগুলোও হয়ে যায় বনসাই।

ভাব আর ভাষার তর্কে ডুবে কাজ নাই-
আজো ভাষা ভাবমুখি, জানি এই নিত্যতাই।
ইচ্ছেমাফিক কথাগুলো নীরবতার বনসাই।

আমি আর তুমির তর্কে কোন কাজ নাই-
এসো একই সুরে আলাদা আলাদা গান গাই।
দু'জনেই যত্নে লালন করি নিজস্ব বনসাই।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

লিখতে লিখতে

লিখতে লিখতে
লিখতে লিখতে
আবারও লিখতে লিখতে
লিখতে লিখতে
লিখতে লিখতে আমি... 

পুনশ্চ লিখতে লিখতে
লিখতে লিখতে
লিখতে লিখতে..
লিখতে লিখতেই থামি।

কালের লিখন​

পাহাড়ি মেঘের গল্প

একটা পাহাড়ের গল্প বলি শোন-
পাহাড়টার সখ্যতা ছিলো মেঘের সাথে,
মেঘরাণী নানা বর্ণে সেজেগুজে এসে
বৈকালিক আড্ডা দিতো পাহাড়চূড়ায় বসে।
দূরের কোন অভিযাত্রীর ডিএসএলারে
নিজেকে তুলে ধরতো অপ্সরীর মতো-
তাই দেখে পাহাড়টার ভারি হিংসে হতো,
দিনে দিনে প্রেম জমে জমে সে কঠিন হতাহতো।

প্রায়ই দেখতো মেঘেররাণী বাতাসের সাথে
নেচে যাচ্ছে প্রণয় নৃত্য। বাতাসের ফিসফাসে
জলকেলির ঘ্রান পেতেই পাহাড়টার কাঠিন্য
তরল হতে চাইতো। যেন এক জলজ বিদ্রোহী।
মেঘের পিঠে পাহাড়, পাহাড়ের বুকে মেঘ,
মাঝখানে বাংলা ছবির ভিলেনের মতো বাতাস,
কালিদহের দিকে মিলেমিশে চলেছে বাঁধভাঙ্গা আবেগ।

কঠিনে বুকবেঁধে পাহাড়টার-
মনে হতো বারবার, মেঘ তাকে ভিজিয়ে দিক।
আর একবার খুব করে নরম বুক পেতে দিক।
বারবার মনে হতো মেঘ তাকে ভাসিয়ে নিক।

তারও অনেকদিন পরে,
যেবার কাঁপলো পাহাড় ভীষণ জ্বরে।
তার ঠিক দু'মুহূর্ত পরের ঝড়ে-
ভোররাতের এক উত্তুরে বাতাসের তুড়ে,
রঙবদলের ছলে, সেইযে গেলো মেঘরাণী উড়ে।
এখনো ঠাঁই দাড়িয়ে পাহাড়, খায় জলজ আহার
যদি আবার কোনদিন তার মেঘপরী বৃষ্টি হয়ে ফিরে।

আমরা জানি- পাহাড়ের বুকে অনেক মেঘের পদছাঁপ।
সময় সাক্ষী- মেঘেরও আছে ছলাকলা, জলজ মনস্তাপ।

কালের লিখন

বর্ণীল বিবর্ণতা

চোখের কোণে বিষাদ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা লাল গোলাপ। একটা কালো বিড়াল অযথাই গড়াগড়ি খাচ্ছে সূর্যের আলোতে। একটা সাদা পৃষ্ঠা উড়াউড়ি করছে বিস্তীর্ণ আকাশ বক্ষে। বৃষ্টির মতো টুপটাপ ঝরে পড়ছে অজস্র হলুদ পাতা। চারপাশে শুধুই রঙ, আমার মনে পড়ছে বর্ণীল তোমার কথা।

আমার মনে পড়ছে কালার ব্লাইন্ড শৈশব, বর্ণহীন সকল অনুভব। সজনে গাছের শরীর বেয়ে বৃষ্টিস্নাত জলের ধারা। একটা মানুষ নাম জানিনে, ভিজে চুপসে পাগলপারা। তুলোর মতো বিকেলগুলো, পায়ে জড়ানো সন্ধ্যে ধূলো, সন্দেশদুপুর রোদের আঁচে এলোমেলো। আজকে আবার ভীষণরকম মনে হলো।

মনে হলো তোমার কথা, আমার কথা, বর্ণ এবং রঙের কথা। মনে হলো অজস্র সুখের মাঝেও থাকে কিছু তুমুল ব্যথা। থাকে কিছু গভীর কথা অগভীর এই জীবন পটে। স্মৃতি নামের একটা ইঁদুর ভীষণরকম জাবর কাটে। তোমাকে পাই, আমাকে পাই, রঙগুলোই সব ঝাপসা কেবল অলীক চোটে।

এত বর্ণ এতএত রঙ, আমার তবুও বিবর্ণ এই সময় কাটে।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

মিছে দাম্পত্য

উন্মাদ দিন সারারাত বসে থাকে,
কখন ভোরের দ্বোর খুলবে এই আশায়।
মোহগ্রস্থ রাত সারাদিন অপেক্ষা করে,
কখন হবে সন্ধ্যের আধো-আঁধারে সূর্যের প্রস্থান।

অস্থির আমি প্রশিক্ষণ নেই স্থিরতার,
মুহূর্ত মিউট করে দিয়ে, সময়ের গান শুনি।
স্থির তুমি অস্থির পরিভ্রমণে ব্যস্ত এখনো-
কিছুমেঘ মিছে দাম্পত্যে, পাশাপাশি উড়ে দিনমান।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫ 

হীনতা

ঘুমহীন একটা রাত, ওমহীন একটা হাত,
মায়াহীন একটা মন, ছায়াহীন অনুক্ষণ।
ভোরহীন একটা সকাল, ঘোরহীন প্রাপ্তি-
ভাবহীন একটা ভাবনা, ভাষাহীন সমাপ্তি।

চোখহীন একটা দৃষ্টি, মুখহীন এক মায়া,
দুঃখহীন এক চরাচরে, সুখহীন সে ছায়া।
মেঘহীন এক আকাশে, বেগহীন অনুভব-
মেধাহীন এক কলরবে বাধাহীন আর সব।

মূলহীন একটা বাক্য, ভুলহীন কোন ঐক্য-
ঢিলহীন কোন পুকুরে- মিলহীন মতানৈক্য।
সুরহীন একটা গান, দূরহীন এক নিকটে-
ভরহীন এক চলাচল, স্বরহীন বুক পকেটে।

ক্ষয়হীন একটা স্মৃতি, ভয়হীন মায়াজাল-
জয়হীন তবু বিজয়ী এই লয়হীন মহাকাল।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

শীতের গীত

ধ্বংস হতে হতে নষ্ট হতে হতে,
ভগ্ন হতে হতে মগ্ন হতে হতে-
অযথাই কেটে যাচ্ছি জীবনের লাল ফিতে।

মুগ্ধ চোখে আর কোন মায়া নেই-
অবশিষ্ট নেই কোন বারোয়ারী আচ্ছাদন-
শুধু এখনো শীত এলেই কেমন করে মন।

কালের লিখন

সময়

মুখে হলুদ পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
পাতাল স্টেশন। একটা গাভীন গাঁই-
চেঁচাচ্ছে প্রসব যন্ত্রণায়। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে
পত্রিকা পড়ছে জনগণ।  সস্তা রোগে
বস্তাভর্তি মরা মানুষের লাশ নিয়ে-
দ্রুত বেগে উড়ে গেলো অন্ধ পাখিটা।

একগুচ্ছ পালক ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো
জলে আর স্থলে। মানুষ আজও সেই-
পালক গণনা করে, ইতিহাস তাকেই সময় বলে।

কালের লিখন

ভরাডুবি

ঘর ভর্তি অজস্র বই, মন ভর্তি অন্ধকার-
পথ ভর্তি মানুষ শুধুই, পায় জড়ানো কাঁটাতার।
হাত ভর্তি স্মৃতির ধুলো, স্মৃতি ভর্তি ভুল-
জীবন ভর্তি হাজারো বাঁক, মুঠো ভর্তি আঙুল।

আশা ভর্তি নিরাশার গান, ঘুম ভর্তি চোখ-
ভাষা ভর্তি ভাবের দ্যোতনা, শহর ভর্তি লোক।
দৃষ্টি ভর্তি আরাধ্য ক্ষণ, ক্ষরণ ভর্তি খরা-
বৃষ্টি ভর্তি গুচ্ছ কদম, আছে বাইরে জলের ধারা।

ইচ্ছে ভর্তি অনিচ্ছেরা, খাতা ভর্তি লেখা-
বাতাস ভর্তি অক্সিজেনে আকাশ ভর্তি ফাঁকা।
মানুষ ভর্তি এই জগতে, মানুষ-ই তবু একা-
দৃশ্য ভর্তি চারপাশ, যেন অদৃশ্য হাতে আঁকা।

শব্দ ভর্তি কাব্য শরীর, জল ভর্তি নদী-
তবুও কখনো ফাঁকাই লাগে, সংশয় ভর্তি যদি।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

তাড়না

একটা বুনো ষাঁড় তাড়া করেছে-
ভূমণ্ডলের যাবতীয় সময়কে। আর
সময় তাড়া করেছে সমস্ত মানুষকে।
মানুষ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে মুহূর্তের মাছি।

আমাকে তাড়াতে তাড়াতে তুমি,
আরও বেশি করেছো- কাছাকাছি।

কালের লিখন 

বেলাশেষে

সহিষ্ণুতা নাই আর মোটে,
অশান্তি স্থির ক্লান্ত ঘাটে।
মানুষ কেমন অস্থির আজ-
সূর্য কিন্তু যায়নি পাটে।

দুরন্ত রোদ, চেতনা বোধ,
এখনো ফুল, এখনো মাটি।
মনের মাঝে ঘুমিয়ে আছে-
আর একটা মন পরিপাটি।

এখনো গান, ফসল ফলে-
মাঠের পরে রোদ্র খেলে।
মানুষই কেমন উতলা হয়-
দৌড়ে বেড়ায় পাপ্য ফেলে।

দৌড়ে আছে সকল লোকে-
আঁটকে আছে সময় বুঝে!
তুমি আমি হাঁটছি কেবল,
কেউ কাউকে পাইনি খুঁজে।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

পতনধ্বনি

পত্রহীন বৃক্ষের মতোন ডালপালা নিয়ে সাথে-
মৃত মানুষের নীরবতা কথাহীন এই রাতে।
গোলগাল পৃথিবীতে স্থির অস্থিরতা,
মানুষের মনে মূলে অলীক বারতা,
তবুও মানুষ যায় মানুষের কাছে ঘুরে ফিরে-
কিছু পাখি পথহারা, ফিরে না কখনো আর নীড়ে।

ঘুমহীন কেউ একজন জেগে থাকে ঘন রাতে-
পেঁচার চোখের মতো চোখ, উপমার সংঘাতে,
কিছু স্মৃতি খুচরো ভীষণ খুঁচা মারে,
যেন অন্ধ লোক বই পড়ে অন্ধকারে।
বাবার হালের হাল-জমি, মায়ের মুখের ভাষা, 
এইসব রাতে শিশিরের মতো জমে ভালোবাসা।

পতিত নীরব রাতে প্রত্যাশাও জাগে মনে জানি-
চেয়ে দেখি পাতা ঝরে অবিরাম, বিরহটা মানি।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

সুই-সুতা


সেলাই করে দাও- আমার ঠোঁটের ফাঁক,
সকল কথা নিমেষে তোমার হয়ে যাক।
সেলাই করে দাও- ছেঁড়া এই হৃদয়খানি,
আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রাখো- রাজেন্দ্রাণী।

সেলাই করো আঙুলে- এই আমার আঙুল,
সুই-সুতায় ফুটিয়ে তুলো এক জীবনের ভুল।

কালের লিখন​

কালের শোক

পা দু'টি ঠিক পায়ের জায়গায় নেই-
হাত দু'টো নেই আর আঙ্গুলের পাশে।
মাথাহীন ধড়, তাজা রক্তে ভাসা ঘর-
অনন্ত চরাচর, যাচ্ছে ক্রমশ ভেসে।

এখানে দাঁতে শুধু ভাতের স্বাদ খেলে,
চিন্তাগুলো উড়ে যায় পথের ধুলায়।
কিছু মানুষ বিশ্বাসী ভাইরাসে স্থির
আক্রান্ত, রক্তেই শুধু মুক্তি পেতে চায়।

কথার পিঠে কথা নাই এখন, খুন!
যুক্তির পিঠে আজ বোঝাই অন্ধঝোপ।
এখানে শুদ্ধ চিন্তাই নিষিদ্ধ ক্রমশ-
কলম ধরলে খাবে চাপাতির কোপ।

শব্দ সাক্ষী কলম রক্ষী সুশুদ্ধ দিক-
ব্যক্তির প্রয়াণে মত মরে নাই ঠিক।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

অস্পৃশ্য অনীহা

একদিন মনে হলো- পৃথিবীতে আর,
কোনকিছু নেইকো বিশেষ লিখিবার।
মানুষের অনুভব যন্ত্রে বাঁধা আজ-
চোখে মুখে নানারঙ মিথ্যে কারুকাজ।

সব তো যাচ্ছেই লিখে পত্রিকা পেপার,
নতুন কি আছে তবে কবিতা লেখার।
অগ্রজ কবিরা এঁকে গেছে যত ছবি,
তাই কি আয়ত্তে এসেছে এখনো সবি?

মানুষের করনীয় রীতিনীতি যত,
কবিরা লিখেছে সব কাব্যে অবিরত।
লিখেছে লেখার ছলে জীবনের গান-
কতটা পড়েছে মানুষ? কি সেই দান?

প্রাত্যহিক আকাশ বাতাস জলে স্থলে,
এখনো ঘুরছে মানুষ আবদ্ধ মূলে।
ছিঁড়েনি এখনো তার মায়া বারোয়ারী,
মানুষ হয়নি মানুষ এ লজ্জা তারি।

এ লজ্জা কলমেরও, কবিতার গ্লানি-
কি করে আবার তাকে অনুভবে টানি?

কালের লিখন​
ডিসেম্বর- ২০১৫

বিরহী মন

কোথাও মানুষ নাই একা আমি স্থির,
মনে কোন আশা নাই, নৈরাশ্যের ভিড়।
হতাশা বাতাস হয়ে ঢুকে মুখে নাকে,
ভেবেছি পাবোই কিছু, পাইনি তো তাকে।

বুঝাতে পারিনা শুধু এই মনটাকে-
না পাওয়া মানুষ সবাই, পেয়েছে কে?
মন চায় বসুধায়, সে আমার হোক,
বুঝে না মনটা যে- প্রাপ্তি মানেও শোক।

যখনি পাওনি কিছু ততক্ষণ সব-
পাপ্তি মানেই হারানো, মরা অনুভব।
না পেলে সবটা ঠিক থাকলো তোমার,
লালিত জনমব্যাপী সুপ্ত হাহাকার।

এত কিছু বলে বলে বুঝালাম তাকে-
মনের না বোঝ আসে, বিরহে সে থাকে।

কালের লিখন​
ডিসেম্বর- ২০১৫

নামাঙ্কন

তুমি যেমন হাসতে পারো-
কাঁদতে পারো জনমভর।
আমিও সেই নিজেতে নেই
অন্য কোথাও ভয় ও ডর।

ভাবছ তুমি পাগল আমি?
নিজের মতো থেমেই আছি।
অস্থির চিত্ত ভ্রমণে নিত্য-
বাঁচবো বলে নাচন নাচি।

আকাশ দেখি খুলিয়া আঁখি,
জমিনে দেই দুই'পা ফেলে।
মনেতে ভাবি ভাব অভাবী
কি করতাম তোমায় পেলে।

ছোট্ট বেলার খুচরো গল্প,
অল্প খানিক, কল্প কাহন।
তোমায় ঠিক কি শুনাতাম
সময় নায়ে-স্থির বাহন।

চাঁদের কথা অলীক ব্যথা
ছোট বিশ্বাস বড় ব্যাপার।
তোমার সাথে শেয়ার হতো-
পুরনো মন, র‍্যাপিং পেপার।

ভাগের রুটি, আগের জুটি
প্রাচীন কিছু মরা অভ্যাস।
অভিন্ন গোল মুগ্ধ ভূগোল,
মিলে মিশেই ভিন্নতা বাস।

এক দৃশ্যের অজস্র রুপ,
ভিন্ন সকল চোখের মাপ।
তোমায় নিয়ে পরিধি দিয়ে
মেপে নিতাম সে মনস্তাপ।

মেপে নিতাম কান্না হাসির
পরিমাপ সে, ঠিক কতটা।
খুঁচিয়ে তুলে মধুর ভুলে-
জ্বলতে থাকে, কোন ক্ষতটা।

যেই ক্ষততে ঘা নেই কোন
যায়না চোখে কিছুই দেখা।
সাদা পৃষ্ঠায় কালো অক্ষর
তোমার আমার নাম লেখা।

কালের লিখন​
ডিসেম্বর- ২০১৫

স্মৃতির দহন

হঠাৎ করেই সন্ধ্যা নামে বৃষ্টি নিয়ে,
তখনো ভীষণ যাচ্ছে দেখা দৃষ্টি দিয়ে।
তাকিয়ে ছিলাম জানলার পাশে পথে,
মনে দোলা- স্মৃতির খেলায় আচম্বিতে।

ভেসে উঠে একে একে অনেক খবর,
মন মাঝে আছে যত মুখের কবর।
ছোটবেলা বড় খেলা মগ্ন সন্তরণ-
দু'টি ছানা একটি বাসা সুপারি বন।

বিশাল পুকুর বৃক্ষছায়া তীব্ররোদ-
ইচ্ছে হলে জলে নেমে নেংটা উবুদ।
একটা দুপুর দাপিয়ে বেড়াই জলে,
দস্যিছেলে ঘুরছে কেবল ছায়া ফেলে।

এই সন্ধ্যাবেলা মনের তলায় মন,
জ্বেলে যাচ্ছে স্মৃতির, প্রদীপ অনুক্ষণ।
জ্বলে যাচ্ছে বৃষ্টিজলে মনের আগুন,
জানলা বন্ধ বৃষ্টি উধাও, মনে খুন!

তারপর রাত্রি সারা- চুয়ে চুয়ে মনে-
ভিজতে ছিলাম একা  স্মৃতির দহনে।

কালের লিখন​
ডিসেম্বর- ২০১৫

বিস্তারিত বিঘ্নতা

উঠতে উঠতে পাহাড় চূড়ায় একা-
নামতে নামতে গহীন জলও ফাঁকা।
দেখতে দেখতে দৃষ্টিমূলে ধারাপাত,
চলতে চলতে পথপাশে কপোকাত।

শুনতে শুনতে কর্ণমূলে বধিরতা-
জানতে জানতে জ্ঞানতৃষ্ণা জ্বালে চিতা।
মানতে মানতে মাথানত কথা নেই-
থামতে থামতে নিশ্চল হারাচ্ছে খেই।

বলতে বলতে সকল কথায় তাল,
ঘুরতে ঘুরতে চক্রাকার মহাকাল।
বসতে বসতে উঠে যাচ্ছে ভাবালুতা,
হাঁটতে হাঁটতে ভাবনা সকল কাটে ফিতা।

লিখতে লিখতে কালের লিখন ভবে-
বেঁচে আছে শব্দপ্রেমে মগ্ন অসম্ভবে।

কালের লিখন​
ডিসেম্বর- ২০১৫

সোহাগী বেহাগ

খানিকটা লিখি বটে সবটা লিখি না
কতকিছু ঘটে রোজ, গায়ে তো মাখি না।
বেছে বেছে অনুভব সাজাই যতনে-
উর্ধ্বগামি কথ্য ভাষ্য মূলত পতনে।

মগ্ন অনুভূতি স্থিতির পরাগ মেলে,
কাকে ধরি কাকে ছাড়ি স্থির হলাহলে।
যতটা বুঝতে পারি ততটা আবার,
কিছুতেই পারিনা- বুঝাতে পুনর্বার।

নকল ভাবনা নিয়ে অনন্ত বিনয়ে,
সকল সমাধা খুঁজি অস্থির প্রণয়ে। 
কিছু ভাব আদতেই মরে পচে গেছে,
সেই কথা মূল্যহীন জীবনের কাছে।

তবুও ভাবনা ভাবি জীবন মূলের,
সোহাগে বেহাগ বাজাই নগ্ন ফুলের।

কালের লিখন​
ডিসেম্বর- ২০১৫

যৌক্তিকতা

আমাকে শিখিয়ে দাও সেই গানখানি,
যেই গানে মানুষের আছে কানাকানি।
আমাকে পড়তে দাও সেই কাব্যকথা,
যেখানে এসেছে ফিরে মূল মানবতা।

আমাকে দেখাও তুমি সেই ছবিখানা,
ছায়াচিত্রে যার মানবিক দাগ টানা।
আমাকে শুনাও সেই মনোহর বানী-
যেখানে প্রণয় আছে, নাই কোন গ্লানি।

আমাকে বুঝাও তুমি জীবনের মানে,
ধর্ম কি কর্ম কি? মূল মর্ম কোনখানে।
আমাকে বলো তো দেখি সহজ কথায়-
মানুষ, মানুষ কেন? এই বসুধায়?

আমাকে জবাব দাও, অজস্র জিজ্ঞাসা-
জেনে বুঝে থাকবো মানুষের গাঘেঁষা।

কালের লিখন​
ডিসেম্বর- ২০১৫

বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫

ক্লান্তির গান

প্রান্তর ধূধূ ফাঁকা, কিচ্ছু যায় না দেখা,
নিরালে পড়ছি বসে নিয়তির লেখা।
উড়ছি ঘুড়ি হয়ে, নাটাই অন্য হাতে-
আমিহীন আমিত্ব, মরে বাঁচা সংঘাতে।

দূরে কাশবন চিরকালীন সাদা রং-
প্রত্যেক মানুষের চোখেমুখে নানা সং।
কুশীলব অভিধা নাটকে নট-নটি!
মানুষ মাত্রই অভিনেতা পরিপাটি।

নদী জল টলমল, দূর্বাদল মাটি-
মানুষের মতো ভবে, নয় কিছু খাঁটি!
নিরাপদ বলয়ে সে- সূক্ষ্ম দাগ টেনে,
পা ফেলে আলগোছে, মৃত্তিকা পাটাতনে।

আকাশ সীমানাহীন, একা পুরোটাই-
এই ক্লান্ত লগ্নে তার মালিকানা চাই।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫

শব্দে আঁকা ছবি

ঘর। বিছানা বালিশ। অলস দেয়াল।
সিলিংফ্যানে ময়লার স্তূপ। টিকটিকির ধূর্ত খেয়াল।

পথ। মানুষ, গাড়ি। খাবারের দোকান।
অসম্প্রচারিত লাইভ দুর্ঘটনা। ভিখিরির অভ্যাসের পিছুটান।।

বাজার। আলু পেয়াজ। কুমড়ো পেঁপে,
সবুজ সবজি। হলুদ কবজি। ধনেপাতার ঘ্রাণ।

মানুষ। স্মৃতির প্রীতি। ব্যর্থ অতীত।
স্বপ্নিল ভবিষ্যৎ। যূথবদ্ধ অহেতুক বর্তমান।

জমিন। বসতি, স্থাপনা। কবরের বাগান।
উঁচুনিচু, জলস্থল। সাফসুতরো প্রাচীন জংগল।

আকাশ। মেঘের আচ্ছাদন। আবেগের ঘনঘটা।
বিশাল ধাঁধাঁ। মহাশূন্যের শূন্য বলয়ে আকর্ষণে বাঁধা।

আমি। অসংখ্য আমিত্বের সমাহার। লাভ লোভ।
অপ্রাপ্তির দেয়ালে বসে অসময়। প্রাপ্তি হতাশা মরা-ক্ষোভ।

তুমি। নির্ভরশীলতা। জীবনদায়ি বৃক্ষ। পরম আশ্রয়।
বিনষ্ট আমি। বহুদিন। অথচ তোমার নেই কোন ক্ষয়।

কালের লিখন
নভেম্বর- ২০১৫ 

কালের লিখন এর একগুচ্ছ “নির্মল জবাব”

কেমন আছেন

কেমন আছেন?
-ভালো আছি। কিন্তু বাক্যটা ভেজাল,
মূলত কেউই ভালো নেই আজকাল।

প্রত্যেকের অন্তরে জ্বালা মনেরতাপে জ্বলে,
তবুও অভ্যাসের মতো ভালো আছি বলে।

জুন- ২০১৫

।। 

শব্দের আঁকিবুকি

তোমার বয়স কত?
-আমি সকল বয়সী,
শিশু হতে বৃদ্ধ সমান ভালোবাসি,
কেউ বলে আট, কেউ বলে আশি।

তোমার নিবাস কোথায়?
-আমি দুরন্ত পরবাসী,
ঘরের মধ্যেই ঘর বেঁধেছি সুরে,
আমি কাছের মানুষ থাকি তবু দূরে।

তোমার নামটা তবে কি?
-চলছে নাম নিয়ে ভেল্কি-চালাকি,
নামে কি আর মানুষ থাকে নাকি?
আমার নাম শব্দের আঁকিবুকি।

জুলাই- ২০১৫


।।


সময়ের রোগ

কি করো?
-বসে আছি।

বসে বসে?
-দেখছি, অবশ্য দেখাও না ঠিক
তাকিয়ে আছি।

-পার্থক্য?
দেখায় স্থির মনের যোগ।
আর তাকিয়ে থাকা সময়ের রোগ।

জুন- ২০১৫

।। 

ব্যথার পাহাড়

মন খারাপ?
-না তো। অযথা বকছি প্রলাপ।

কি হয়েছে তাহলে?
-ছবি আঁকছি চোখের জলে।

বড় কষ্ট তোমার?
- না না। এ তো অন্তর্গত হাহাকার।
জানো তো প্রত্যেকের বুকে ব্যথার পাহাড়।

জুন- ২০১৫

।।


মতানৈক্য

কেমন আছেন?
-যেমন দেখছ আমায়।
শব্দের মতো বাঁধা দাড়ি কমায়।

আপনি কি বাক্য?
- ভেবেছিলাম তাই, কিন্তু না
এখানেও আছে নানা মতানৈক্য।

জুন- ২০১৫

।।

পাঠ

পড়ছেন?
-ভাবছি পড়বো...। আপনাকে।

আমাকে?
- পড়ুন!
একদম জলের আঁকার আমি-
সহজলভ্য কিন্তু ভীষণ দামী।
অক্ষর সব জমাট বেঁধে চুলে-
অন্ধকারে লুকায় অলীক ভুলে।

পরের পাঠ?
-জানেন তো শিশু সবাই কালের কাছে
এখনো পার হইনি জীবনের চৌকাঠ।

জুন- ২০১৫

।।


খবর

কি খবর?
- খড়ের খোয়াড়ে
কাটছি জাবর।

কি করো?
- গত মাঘের শীতে
আজো কাঁপছি থরথরো।

কেমন আছো?
- চাইনা মনের খবরে,
চোখ দু'টি মুছো।

জুন- ২০১৫

।।

স্ব-খোঁজ

কি চাও তুমি?
- আমাকে চাই, এক সকালে সেই যে আমি
হারিয়ে গেলাম, এখনো আমাকে খুঁজে বেড়াই।

তোমাকে পেলে?
- বলবো, কোথায় ছিলে জীবন ফেলে?
জানোনা- সময় আসেনা ফিরে অযথা হারালে।

জুন- ২০১৫

।। 


জীবনের গল্প

কি শুনতে চাও?
- জীবনের গল্প বলো তোমার,
কোথায় উৎপত্তি কোন পথে বয়ে যাও।
কোথায় কোথায় ছিলো যাত্রাবিরতি,
বলে যাও শুনবো- সুখ দুখের স্মৃতি।

কোথা থেকে শুরু করি?
- ভেবো না জীবনের সব আহামরি।
শুরু করো প্রথম মানুষ হবার সময়,
কিভাবে চিনলে প্রথম নিজের হৃদয়।
কখন শুনলে প্রথম, বললে প্রথম কথা,
বলে যাও একেএকে বেঁচে থাকার আকুলতা।

শুনবে মৃত্যু কথন?
- উফফ! দূরে যাও, কিচ্ছু চাইনা এখন।
তুমি তবে বেঁচে নেই? মরে আছো বহুদিন,
অকালের আকালে পঁচে হারিয়েছো মধুঋণ।
মৃত মানুষের কোন গল্প থাকেনা। তাই-
শুনবো না কিছু। আমি জীবনের গান গাই।

জুন- ২০১৫


।।


সংজ্ঞা

দুঃখ কি?
-জীবনের দুরন্ত সব ভুল।

সুখ তবে?
- মুক্ত আকাশ, ফুটন্ত ফুল।

দুঃখ সুখের পরের অধ্যায় কি পাঠে?
-এসবের সংজ্ঞা শিখেই জীবন কাটে।

জুন- ২০১৫



কালের লিখন পরিচিতি

আপনি কে? - আমি গল্পের মহাসমুদ্র,
একটা বিশাল গল্পগ্রন্থ আমার জীবন।
আপনি কি? - আমি ঋদ্ধ অভিনেতা,
অসংখ্য চরিত্র আমার শত বিভাজন।

দাদা আব্দুল হামিদের আদরের ধন হান্নান হামিদ। লেখক নাম- কালের লিখন। জন্ম- আগস্ট-১৯৮৪, জন্মজেলা-জামালপুর। বসবাস- ঢাকা।

কালের লিখন- কবি, লেখক, গল্পকার, গবেষক, সম্পাদক, সংকলক, গীতিকার, পুঁথিকার, শিশু সাহিত্যিক, শিল্প-সাহিত্য সমালোচক, আত্মতাত্ত্বিক দার্শনিক, লোকসাহিত্য ও লালন গবেষক।


বহুমাত্রিক লেখক- কালের লিখন কর্তৃক নির্মাণাধীন গ্রন্থ সংখ্যা ৫০ এর অধিক।