বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫

ক্লান্তির গান

প্রান্তর ধূধূ ফাঁকা, কিচ্ছু যায় না দেখা,
নিরালে পড়ছি বসে নিয়তির লেখা।
উড়ছি ঘুড়ি হয়ে, নাটাই অন্য হাতে-
আমিহীন আমিত্ব, মরে বাঁচা সংঘাতে।

দূরে কাশবন চিরকালীন সাদা রং-
প্রত্যেক মানুষের চোখেমুখে নানা সং।
কুশীলব অভিধা নাটকে নট-নটি!
মানুষ মাত্রই অভিনেতা পরিপাটি।

নদী জল টলমল, দূর্বাদল মাটি-
মানুষের মতো ভবে, নয় কিছু খাঁটি!
নিরাপদ বলয়ে সে- সূক্ষ্ম দাগ টেনে,
পা ফেলে আলগোছে, মৃত্তিকা পাটাতনে।

আকাশ সীমানাহীন, একা পুরোটাই-
এই ক্লান্ত লগ্নে তার মালিকানা চাই।

কালের লিখন​
নভেম্বর- ২০১৫

বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫

শব্দে আঁকা ছবি

ঘর। বিছানা বালিশ। অলস দেয়াল।
সিলিংফ্যানে ময়লার স্তূপ। টিকটিকির ধূর্ত খেয়াল।

পথ। মানুষ, গাড়ি। খাবারের দোকান।
অসম্প্রচারিত লাইভ দুর্ঘটনা। ভিখিরির অভ্যাসের পিছুটান।।

বাজার। আলু পেয়াজ। কুমড়ো পেঁপে,
সবুজ সবজি। হলুদ কবজি। ধনেপাতার ঘ্রাণ।

মানুষ। স্মৃতির প্রীতি। ব্যর্থ অতীত।
স্বপ্নিল ভবিষ্যৎ। যূথবদ্ধ অহেতুক বর্তমান।

জমিন। বসতি, স্থাপনা। কবরের বাগান।
উঁচুনিচু, জলস্থল। সাফসুতরো প্রাচীন জংগল।

আকাশ। মেঘের আচ্ছাদন। আবেগের ঘনঘটা।
বিশাল ধাঁধাঁ। মহাশূন্যের শূন্য বলয়ে আকর্ষণে বাঁধা।

আমি। অসংখ্য আমিত্বের সমাহার। লাভ লোভ।
অপ্রাপ্তির দেয়ালে বসে অসময়। প্রাপ্তি হতাশা মরা-ক্ষোভ।

তুমি। নির্ভরশীলতা। জীবনদায়ি বৃক্ষ। পরম আশ্রয়।
বিনষ্ট আমি। বহুদিন। অথচ তোমার নেই কোন ক্ষয়।

কালের লিখন
নভেম্বর- ২০১৫ 

কালের লিখন এর একগুচ্ছ “নির্মল জবাব”

কেমন আছেন

কেমন আছেন?
-ভালো আছি। কিন্তু বাক্যটা ভেজাল,
মূলত কেউই ভালো নেই আজকাল।

প্রত্যেকের অন্তরে জ্বালা মনেরতাপে জ্বলে,
তবুও অভ্যাসের মতো ভালো আছি বলে।

জুন- ২০১৫

।। 

শব্দের আঁকিবুকি

তোমার বয়স কত?
-আমি সকল বয়সী,
শিশু হতে বৃদ্ধ সমান ভালোবাসি,
কেউ বলে আট, কেউ বলে আশি।

তোমার নিবাস কোথায়?
-আমি দুরন্ত পরবাসী,
ঘরের মধ্যেই ঘর বেঁধেছি সুরে,
আমি কাছের মানুষ থাকি তবু দূরে।

তোমার নামটা তবে কি?
-চলছে নাম নিয়ে ভেল্কি-চালাকি,
নামে কি আর মানুষ থাকে নাকি?
আমার নাম শব্দের আঁকিবুকি।

জুলাই- ২০১৫


।।


সময়ের রোগ

কি করো?
-বসে আছি।

বসে বসে?
-দেখছি, অবশ্য দেখাও না ঠিক
তাকিয়ে আছি।

-পার্থক্য?
দেখায় স্থির মনের যোগ।
আর তাকিয়ে থাকা সময়ের রোগ।

জুন- ২০১৫

।। 

ব্যথার পাহাড়

মন খারাপ?
-না তো। অযথা বকছি প্রলাপ।

কি হয়েছে তাহলে?
-ছবি আঁকছি চোখের জলে।

বড় কষ্ট তোমার?
- না না। এ তো অন্তর্গত হাহাকার।
জানো তো প্রত্যেকের বুকে ব্যথার পাহাড়।

জুন- ২০১৫

।।


মতানৈক্য

কেমন আছেন?
-যেমন দেখছ আমায়।
শব্দের মতো বাঁধা দাড়ি কমায়।

আপনি কি বাক্য?
- ভেবেছিলাম তাই, কিন্তু না
এখানেও আছে নানা মতানৈক্য।

জুন- ২০১৫

।।

পাঠ

পড়ছেন?
-ভাবছি পড়বো...। আপনাকে।

আমাকে?
- পড়ুন!
একদম জলের আঁকার আমি-
সহজলভ্য কিন্তু ভীষণ দামী।
অক্ষর সব জমাট বেঁধে চুলে-
অন্ধকারে লুকায় অলীক ভুলে।

পরের পাঠ?
-জানেন তো শিশু সবাই কালের কাছে
এখনো পার হইনি জীবনের চৌকাঠ।

জুন- ২০১৫

।।


খবর

কি খবর?
- খড়ের খোয়াড়ে
কাটছি জাবর।

কি করো?
- গত মাঘের শীতে
আজো কাঁপছি থরথরো।

কেমন আছো?
- চাইনা মনের খবরে,
চোখ দু'টি মুছো।

জুন- ২০১৫

।।

স্ব-খোঁজ

কি চাও তুমি?
- আমাকে চাই, এক সকালে সেই যে আমি
হারিয়ে গেলাম, এখনো আমাকে খুঁজে বেড়াই।

তোমাকে পেলে?
- বলবো, কোথায় ছিলে জীবন ফেলে?
জানোনা- সময় আসেনা ফিরে অযথা হারালে।

জুন- ২০১৫

।। 


জীবনের গল্প

কি শুনতে চাও?
- জীবনের গল্প বলো তোমার,
কোথায় উৎপত্তি কোন পথে বয়ে যাও।
কোথায় কোথায় ছিলো যাত্রাবিরতি,
বলে যাও শুনবো- সুখ দুখের স্মৃতি।

কোথা থেকে শুরু করি?
- ভেবো না জীবনের সব আহামরি।
শুরু করো প্রথম মানুষ হবার সময়,
কিভাবে চিনলে প্রথম নিজের হৃদয়।
কখন শুনলে প্রথম, বললে প্রথম কথা,
বলে যাও একেএকে বেঁচে থাকার আকুলতা।

শুনবে মৃত্যু কথন?
- উফফ! দূরে যাও, কিচ্ছু চাইনা এখন।
তুমি তবে বেঁচে নেই? মরে আছো বহুদিন,
অকালের আকালে পঁচে হারিয়েছো মধুঋণ।
মৃত মানুষের কোন গল্প থাকেনা। তাই-
শুনবো না কিছু। আমি জীবনের গান গাই।

জুন- ২০১৫


।।


সংজ্ঞা

দুঃখ কি?
-জীবনের দুরন্ত সব ভুল।

সুখ তবে?
- মুক্ত আকাশ, ফুটন্ত ফুল।

দুঃখ সুখের পরের অধ্যায় কি পাঠে?
-এসবের সংজ্ঞা শিখেই জীবন কাটে।

জুন- ২০১৫



কালের লিখন পরিচিতি

আপনি কে? - আমি গল্পের মহাসমুদ্র,
একটা বিশাল গল্পগ্রন্থ আমার জীবন।
আপনি কি? - আমি ঋদ্ধ অভিনেতা,
অসংখ্য চরিত্র আমার শত বিভাজন।

দাদা আব্দুল হামিদের আদরের ধন হান্নান হামিদ। লেখক নাম- কালের লিখন। জন্ম- আগস্ট-১৯৮৪, জন্মজেলা-জামালপুর। বসবাস- ঢাকা।

কালের লিখন- কবি, লেখক, গল্পকার, গবেষক, সম্পাদক, সংকলক, গীতিকার, পুঁথিকার, শিশু সাহিত্যিক, শিল্প-সাহিত্য সমালোচক, আত্মতাত্ত্বিক দার্শনিক, লোকসাহিত্য ও লালন গবেষক।


বহুমাত্রিক লেখক- কালের লিখন কর্তৃক নির্মাণাধীন গ্রন্থ সংখ্যা ৫০ এর অধিক।