শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

মাকে মনে পড়ে ।। কালের লিখন

মাকে মনে পড়ে। একখানা মুখ দুইখানা চোখ তার- এমন সুশ্রী চোখ-মুখ দেখিনাই কারও আর, যখন একা হাঁপিয়ে উঠি যাপিত জীবন ভারে। অন্ধকারে গাছের পাতা ব্যথার মতো নড়ে- তখন আমার ভীষণ রকম মাকে মনে পড়ে।
ঘাম ভেজা মুখ উনুনের আঁচ লেগে- ক্লান্তিহীন আছে মায়ে দিবারাত্র জেগে। চোখের কোণে আলোর ঝিলিক খেলে- কোথায় গেলো হঠাৎ- মা আমাকে ফেলে? মনের মাঝে অবোধ আদর একাই নড়েচড়ে- একলা হলেই মায়ের মুখটা ভীষণ মনে পড়ে।
তখন সবে বুঝতে শিখেছি আলো আর আঁধার, সবকিছুতেই জবাব খুঁজি জাগতিক ধাঁধাঁর। সন্ধে হলেই মায়ের আঁচল ঘেঁষে- গল্প শোনার বায়না হত রাজপুত্রের বেশে।ছিলো ডালিমকুমার ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী- মা বলত - ঘুমাও বাবা জেগে আছি আমি।
জেগে দেখি খাঁখাঁ রোদে পুড়ে, কাছের জমিন যাচ্ছে ক্রমেই দূরে, একটা তারা হঠাৎ গেছে স্বস্থানে ফিরে- ততক্ষণে অকাল ঝড়ে শৈশব গেছে মরে। লেগে গেছে অনাথ আখ্যা, করুণা মাখা হাত পড়ছে পিঠের পরে। চেনাদৃশ্য অচেনা ভীষণ, কাছের মানুষ যোজন দূরে। দিন তো যায়ই রাত এলেই মাকে ভীষণ মনে পড়ে।
মাকে মনে পড়ে। কেঁপে উঠতো মা আমার একটু অনাদরে। চুমুর পরে চুমু দিতো লালচে ঠোঁটের পরে। ব্যথা পেলে চেপে ধরে নরম বুকে, আকুল হতো ভীষণ রকম পুত্রশোকে। নয়ন তারায় ভালোবাসার কাজল মেখে, ফুঁ মন্তর দিয়ে দিতো অবোধ সুখে। রাতের সাথে মিলেমিশে মায়ের গায়ের ঘ্রাণ- ঘুমের ওমে তলিয়ে যেতাম- স্মৃতিতে অম্লান।
এখনো আমার ঘুম না এলেই, একটু মন কেমন হলেই, ছলছলায় দুটি চোখের পাতা। স্বযতনে খুলে বসি মাতৃস্নেহের খাতা। পাতায় পাতায় মুখচ্ছবি পৃষ্ঠা উল্টে যাই- নানা রকম অনুভবে মাকেই ফিরে পাই। গর্ভের দায় খর্ব করার পথ নেই ভবপারে। নাড়ির টান, জীবনের গান মায়ের স্মৃতি ধরে। যখন একা হাঁপিয়ে উঠি যাপিত জীবন ভারে। অন্ধকারে গাছের পাতা ব্যথার মতো নড়ে- তখন আমার ভীষণ রকম মাকে মনে পড়ে।

ফেব্রুয়ারি- ২০১৬

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন