শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

প্রস্থান

একদিন খুব যত্ন করে ধরে রাখা,
হাতের মুঠোফোনটিও বুঝতে পারবেনা,
ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে গেছে স্নায়ুতন্ত্র,
নিশ্চল, নিশ্চুপ, নিথর হয়েছে দেহযন্ত্র!
বন্ধ হয়ে গেছে অনু পরমাণুর ঘর্ষণে সৃষ্ট বিদ্যুৎ শক্তি,
যাকে অনন্তকাল আত্মার বিভাজনে দিয়ে এসেছি ভক্তি।

কেউ একজন ঝরে গেছে, তাতে কী?
তখনো ঘাসের ডগায় শিশিরকনা
উন্মুখ হয়ে আছে, রোদ্রতাপে বাষ্প হয়ে
আকাশ মুখী প্রেমে। গঞ্জে গ্রামে-
খুব ভোরে তখনো বকুল সৌরভ ছড়াবে,
গায়ের মেয়ে, চকিতে চেয়ে, ফুল কুড়াবে,
তখনো পঁচা গলা এঁদো পথে, কোনমতে
সটান চলে যাবে
দু-একটা দু চাক্কার সাইকেল।
কেউ বুঝতেই পারবেনা, কেউ একজন নেই,
বন্ধ হয়ে গেছে মহাময় জীবনের আচানক খেল।

তখনো বাতাসে জলবায়ুর সংবাদ, ভূখণ্ডে ভূখণ্ডে,
দেশে দেশে শান্তির নামে অশান্ত যুদ্ধের দামামা,
খালি পেটের মানুষ হয়েছে গেটের কাছে বিদ্রোহী,
ভিতরে হিমশীতল হাওয়ায় উড়ে সভ্যতার উঠানামা।

তখনো ঘরে আলো নেই, মেঘেরা যাচ্ছে কোথাও,
রাত্রির দিকে ধেয়ে যাচ্ছে ক্রমশ মায়াবী বিকাল,
সবুজ লাল পতাকা গায়ে, ন্যুব্জ জীবনের দায়ে
হেঁটে যাচ্ছে বিরামহীন অন্ধকারে অনন্ত মহাকাল।

তখনো গণতন্ত্র, মানবযন্ত্র, ভাবনা ভ্রান্ত- সকলে
তালগোল পাকিয়ে চক্কর খাচ্ছে চেতনার চারপাশ,
হিসেব নিকেশ গ্লানি আর ক্লেশ, আশার বীজে
তখনো চলছে সুজলা ভুমিতে ফসলের চাষবাস।

চাঁদের কণা, প্রেয়সী মুনা, ঠাণ্ডা জল, দখিন হাওয়া,
ঘর সংসার, দোকান বাজার, কর্মহাজার, সব চলমান,
তখনো বাউল, খুলে এলো চুল, ভুলের নামে নতুন
ভুলে, শোকের দিনে গলা ছেড়ে গাইছে প্রেমের গান।

তখনো সবাই দৌড়ে আছে,
ফুল আর ফল গাছে গাছে,
একটি ফুলের ঝরে যাওয়ার দিনে,
ছলছলানি নেই কারো আর মনে,
ঝরা- পড়ায়, মন নেই কারো আর,
আলোয় বসে খুঁজছে সবাই নিটোল অন্ধকার।

খুব সকালে প্রাতভ্রমণ, সন্ধ্যে বেলায় দূরে কোথাও
হুইসেল বাজে, কানের কাছে বাজে কালের বেল।
কেউ বুঝতেই পারলোনা, কেউ একজন নেই,
বন্ধ হয়ে গেলো মহাময় জীবনের আচানক খেল।

ক্রমশ ফুরিয়ে আসা অম্লজানের ন্যায্য হিস্যা,
কেউ একজন ছেড়ে দিয়েছে, কারো ফুরিয়েছে-
অপরূপ আলো ঝলমলে ধরিত্রীর রুপ-রস-গন্ধ-স্বাদ।
একদিন জানবে কেউ কেউ, মরে গেছে মরা অপবাদ।

কালের লিখন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন