মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৬

সত্য বল সুপথে চল ।। লালনবাণীর প্রকৃত পাঠ

সত্য বল সুপথে চল
ওরে আমার মন,
সত্য সুপথ না চিনিলে
পাবি না মানুষের দরশন।
ফড়িয়ার মহাজন যেজন,
বাটখারাতে করে ওজন,
গদিয়ান মহাজন যেজন,
বসে কিনে প্রেমরতন।
পরদ্রব্য পরনারী হরণ করো না,
পারে যেতে পারবে না,
যতবার করিবে হরণ,
ততবার হবে জনম।
লালন ফকির আসলে মিথ্যে,
ঘুরে বেড়ায় তীর্থে তীর্থে,
সহি হলো না একমন দিতে,
আসলেতে পড়ল কম।

আলোচ্য বানীর রুপক শব্দের শব্দার্থ বিন্যাস
সত্য, সুপথ, ফড়িয়ার মহাজন,  গদিয়ান মহাজন, প্রেমরতন, পরদ্রব্য পরনারী, হরণ, জনম, তীর্থ, সহি।
সত্য»  যথার্থ, বাস্তব, নির্ভুল, সঠিক, ঠিক, নিত্যতা, অনশ্বরত্ব, সত্তা, বিদ্যামানতা, প্রতিজ্ঞা, শপথ, দিব্যি, কিরা, যথার্থ জ্ঞান,  নিশ্চয়, অবশ্যই। (সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন, সত্য সুপথ না চিনলে পাবি না মানুষের দরশন- লালিত লালন)
সুপথ»  সুপন্থা, সদুপায়, সৎপথ, উত্তম পন্থা, প্রকৃত পথ, আধ্যাত্মিকপথ, ভেদবিদ্যার পথ।
সত্যসুপথ» সঠিকপথ, সত্যপথ, সোজাপথ, আধ্যাত্মিকপথ, আত্মতত্ত্বের পথ।
মহাজন» সাধু, সন্ন্যাসী, মুনি, ঋষি, যোগী, বিবাগী, বিরাগী, ভিক্ষু, শ্রমণ, বণিক, ব্যবসায়ী, ব্যাপারী, উত্তমর্ণ, কুসীদজীবী, বৈষ্ণব পদকর্তা, আড়তদার, অত্যন্ত সাম্প্রদায়িক মতানুসারী ব্যক্তি, মহৎব্যক্তি, সুদ নিয়ে ঋণ দেয় যে, তপস্বী, বিবাগী, বিরাগী, বৈরাগী, মুনি, যোগী, চাতক, সাধক, উপাসক।
ফড়িয়ার মহাজন» ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ছোট বণিক, ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করা বণিক।
গদিয়ান মহাজন» নির্দিষ্টস্থানে বসে ব্যবসা বাণিজ্যকারী, সিদ্ধসাধু, সুশুদ্ধ সাধক, নির্বাণ লাভকারী সাধক।
প্রেমরতন» প্রেমরূপ রতন, প্রেমের বিনিময়ে পাওয়া যায় যে রতন। মাতৃজঠরে সর্ব জীবের ভ্রণ লালন-পালনকারী সুমিষ্ট, সুপেয় ও শ্বেতবর্ণের অমৃতরসকে পালনকর্তা বা রুপকের আচ্ছাদনে  স্বরূপ বলা হয়।  আরও কিছু রুপক শব্দ হলো-  পালনকর্তা, ঈশ্বর, প্রভু, বিষ্ণু, বুদ্ধ, স্বামী, গার্ডিয়ান, রব, উপাস্য, নারায়ণ, নিধি, নিমাই, নিরঞ্জন, স্বরূপ, খোদা, উপাস্য, পালক, সাঁই প্রভৃতি।
পরদ্রব্য» পরের দ্রব্য, নিজের নয় এরকম। অন্যের দ্রব্য, অপরের দ্রব্য। আত্মতাত্ত্বিক রুপকারদের মতে- পুরুষের শুক্র হচ্ছে পিতৃধন, আত্মতত্ত্বে শুক্রকে পরেরদ্রব্য বলা হয়। এর আরও কিছু রূপক পরিভাষা এরকম- জল, পিতৃধন, বৈষ্ণবী, অহল্যা, কালী, দুর্গা, সীতা, আদম আংগুর, খেজুর, রুটি, ফল, ধন, অমূল্যধন, পিতৃধন।
পরনারী» পরের নারী, অন্যের নারী, অপরের নারী। আত্মতাত্ত্বিক সাধুরা শুক্র কে সব সময় নারী চরিত্রে ধরে তাঁদের দেহতত্ত্বীয় বানী নির্মাণ করেন, এখানে পরনারী বলতে পুরুষের শুক্রকে বুঝানো হচ্ছে, আত্মতত্ত্বে পুরুষের শুক্রকে পরেরনারী বলা হয়। এর আরও কিছু রূপক পরিভাষা এরকম- জল, পিতৃধন, বৈষ্ণবী, অহল্যা, কালী, দুর্গা, সীতা, আদম আংগুর, খেজুর, রুটি, ফল, ধন, অমূল্যধন, পিতৃধন।
হরণ» চুরি, লুণ্ঠন, নাশন, ধ্বংস, নাশ, অপহরণ, মোচন. অপনোদন, দূরীকরণ, পরদ্রব্য জোরপূর্বক কেড়ে নেওয়া, ভাগকরণ।
জনম» ‘জন্ম’ পরিভাষাটির কোমলরূপ, জন্ম, প্রসূত, ভূমিষ্ট, উৎপত্তি, উদ্ভব, সৃষ্টি, দেহধারণ, আকারধারণ, আবির্ভাব, জীবনকাল, দেহাশ্রিত অবস্থা। আত্মতাত্ত্বিকদের মতে, পিতা- মাতার  সন্তানরূপে পুনর্জন্মগ্রহণ, মিলনের সময় পিতামাতার দেহ ভেক্সেগ রসে পরিণত হয়, অতঃপর শুক্রপাতরূপ মৃত্যু দ্বারা তা গর্ভাশয়ে গিয়ে প্রায় ৩০৯ দিনের ব্যবধানে পুনরায় নতুন দেহ ধারণরূপ জনম হয় মানুষের। জনমের আরও কিছু শাব্দিক প্রতিশব্দ হলো-  পুনর্জন্ম, পুনরুত্থান, পরর্জন্মান্তর, পুনরুদ্ভব, পুনরুত্থান, পরকাল, পুনর্জনম, পুনর্জীবন, পুনর্জাগরণ, পুনরাগমন, দেহান্তর, কায়ান্তর, পরজনম।
তীর্থ»  পুণ্যস্থান, পবিত্রস্থান, পাপমোচন স্থান, বিশেষ পুণ্যস্থানরূপে প্রসিদ্ধ, প্রতীতি ও মহাপুরুষগণের অধিষ্ঠানভূমি, ঘাট, গুরু, শিক্ষক, ঋঝি সেবিত পবিত্র জল, জলাশয়ে অবতরণ বা স্নানের ঘাট, আত্মতাত্ত্বিক রুপকারদের মতে- তীর্থ হচ্ছে জননতন্ত্র বা কানাই। এর আরও কিছু রূপক পরিভাষা এরকম- অযোধ্যা, গণ্ডগ্রাম, গোকুল, গোষ্ঠ, নাগিনী, ব্রজ, রজকিনী, করক্সগ, গোয়াল, চিতা, চুলা, নৌকা, কালনাগিনী।
সহি» সাক্ষর, ছাপ, হস্তছাপ শুদ্ধ, বিশুদ্ধ, খাঁটি, ঠিক, নিখুঁত, সঠিক, নির্ভুল।

আলোচ্য বানীর ভাবার্থ ও আত্মতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
আত্মতত্ত্ব দেহতত্ত্বের প্রাণপুরুষ, সাধককুল শিরোমণি বাঙালি ভাষাভাষীদের জন্য মহান রূপকার, বাংলাভাষার মরমিকবি, আত্মতত্ত্বের জনক মহাত্মা লালন সাঁইজি।  মহান আধ্যাত্মিকজ্ঞানতাপস ও জীবন ঘনিষ্ঠ  আত্মতাত্ত্বিক দার্শনিক মহাত্মা লালন সাঁইজি একজন সুমহান রূপকার হিসেবে রুপকের অন্তরালে আত্মতত্ত্বের কথা বলে গেছেন তাঁর নির্মিত সকল বাণীতে, সাঁইজির বাণীর মূল শিক্ষা হলো- মানব জীবনের পরিপূর্ণতার জন্য নিজেকে জানা অতি জরুরী, মানুষতত্ত্ব- শ্রেষ্ঠতত্ত্ব, ভাব নয় বস্তুনিষ্ঠতা মানুষকে মূলে ধাবিত করে। সাঁইজির প্রতিটি সহজ পদ আত্মদর্শনের অমিয় বাণী, এর তাল, লয়, ছন্দ, ভাব, ভাষা, শব্দের গাঁথুনি, উপমাশৈলী আর রুপকের অন্তরালে মূলকের আভাস, মোহিত করে অনুসন্ধিৎসু মন।

মহাত্মা লালন সাঁইজি রচিত প্রতিটি লালনবানী পাঠের দ্বারা আমরা সুখী ও ছোট পরিবার গঠন, পরমায়ু বৃদ্ধি, শুক্রনিয়ন্ত্রণ, জন্মনিয়ন্ত্রণ, সুস্বাস্থ্য রক্ষা, সাঁইদর্শন, আত্মশুদ্ধি, সচ্চরিত্র গঠন ও আত্মসংযমসহ বিশ্বব্যাপী শান্তি ও শৃংখলা প্রতিষ্ঠার জন্য পারিবারিক, সামাজিক ও ব্যাক্তিক জীবনে অনুপম শিক্ষা পেয়ে থাকি। সকল লালনবানীর প্রতিটি ছত্রে ছত্রে মানুষের মনের পশুত্বভাব দূর করে সুস্বভাব ও মানবিক গুণাবলী অর্জনের আকুল আহ্বান জানানো হয়েছে। তাই সাঁইজির উদাত্ত কণ্ঠের আহব্বান- “সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন, সত্য সুপথ না চিনলে, পাবি না মানুষের দরশন।”

সাঁইজির বানী সাধারণত দুটি বা তারও অধিক অর্থ একই সাথে বহন করে, ব্যাখ্যা অর্থ বা ভাবার্থ, বিশ্লেষক ভেদে যাই আসুক, আত্মতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ সকল যুগে সর্বাবস্থায় একই রকম থাকবে, কারন সাইজির বানীর মূল উপজীব্য বিষয় হলো মানুষ। দেহ নামক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন ব্যাতিত সাঁইজির বানীর পাঠউদ্ধার সম্ভব নয় কিছুতেই, উল্লেখ্য- যে লেখা যে বিষয়ে রচিত তাকে সে ভাবেই পাঠ করতে হবে, অন্য বিষয়ের সাথে সাদৃশ্য খুঁজলে তা মূল হারিয়ে ভিত্তিহীন হবে বৈকি।

আলোচ্য বানী দ্বারা সাঁইজি সারা বিশ্ববাসিকে সত্য ও সুপথে আগমনের জন্য উদাত্ত আহব্বান জানিয়েছেন। সকলদল, সকলমত, সকলপথ, সকল ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক মতবাদের সর্বস্তরের মানুষকে উন্মুক্তভাবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে, সত্য ও সুপথে আগমনের জন্য। সাঁইজি রুপকের আচ্ছাদনে আরও বলে গেলেন, প্রকৃত সত্য আর নিরেট সুপথ না চিনলে তরলমানুষ সাঁইয়ের সন্ধান পাওয়া যাবে না কিছুতেই।

পদার্থবিজ্ঞান প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে- ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি পদার্থের তিনটি অবস্থা- কঠিন, তরল ও বায়বীয়। পদার্থের এ তিনটি অবস্থাকে আত্মদর্শনে আকার, সাকার, নিরাকার বলা হয়। যেহেতু মানুষ একটি পদার্থ, এবং আমরা আকারধারী কঠিন পদার্থের মানুষ, তাই আমাদের তরল ও বায়বীয় রূপ বা সাকার ও নিরাকার রূপ অবশ্যই আছে। তাই সাঁইজি সহজ করে বললেন- আকারধারি কঠিন মানুষ তো আমরা সবাই, আমাদের চারপাশে অজস্র আকারধারি মানুষ। এই মানুষের মাঝেই বাস করে তরল পদার্থরূপ সাকার মানুষ আর বায়বীয় পদার্থরূপ নিরাকার মানুষ। যদি সে সাকার আর নিরাকার মানুষের দরশন পেতে চাই আমাদেরকে অবশ্যই সত্য ও সুপথ চিনতে হবে। আকারধারি কঠিন মানুষের উপাস্য হলো, তরল পদার্থরূপ সাকার মানুষ। মানুষ হয়ে মানুষের দরশন পাওয়াই সাধকের প্রকৃত সাধনা। একজন অস্থায়ী বা ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরূপ ফড়িয়া মহাজন বা সাধক নিত্যবস্তু বাটখারায় ওজনে ব্যস্ত, এদের বৈষয়িক ধ্যান ধারনায় কেবলই বিষয়বিষ। অন্যদিকে প্রকৃতসাধক বা গদিয়ান মহাজন উপাস্যরূপ সাঁই বা প্রেমরতন কেনায় অধীর হয়ে চাতকের ন্যায় বসে থাকেন। তাই মহাত্মা লালন সাঁইজি বলছেন- ফড়িয়ার মহাজন যেজন, বাটখারাতে করে ওজন, গদিয়ান মহাজন যেজন, বসে কিনে প্রেমরতন।

আমরা সারাদিন মিথ্যে বললে আর কুপথে চললেও, ইচ্ছে থাকুক আর না থাকুক চারপাশে মানুষ দেখতে বাধ্য, কিন্তু সাঁইজি যে বললেন- সত্য আর সু-পথ না চিনলে সেই মানুষের দর্শন পাওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। আমাদের বুঝে নিতে হবে চলমান পৃথিবীর আকারধারী মানুষের কথা এখানে বলা হয়নি, বলা হয়েছে মানুষের ভিতরে যে আরেক মানুষ বসবাস করে তার কথা।
আত্মতাত্ত্বিক সাধুরা বলেন- সেই স্বরূপ মানুষের দর্শন পেতে হলে গুরু ধরে সঠিক, সত্য আর সুপথ চিনতে হবে, জানতে হবে সেই মানুষের করণ কার্য। অটল হয়ে জন্ম মৃত্যু রুদ্ধ করে সেই মানুষের সন্ধানে যেতে হবে, করতে হবে প্রকৃতি হয়ে প্রকৃতির সাধন। আত্মতাত্ত্বিক সাধুদের মতে- পুরুষের শুক্র হলো তার পিতৃধন, এটা নিজদ্রব্য নয়, পরের দ্রব্য, একে মজুদ করতে হবে এক নিরিক্ষে, আত্মতত্ত্বে শুক্র কে সব সময় নারী চরিত্রে ধরা হয়, যেমন রাঁধা, সীতা, রূপকাররা রূপক ভাষায় এই শুক্রকে পরনারী বলে থাকেন। আগে মন হও প্রকৃতি, প্রকৃতি স্বভাব ধরে, সাধন করে হও ঊর্ধ্বরতী। যে আছে ষড়দলে, সাধ তাঁরে উল্টা কলে, এরূপ সাধন করলে, দ্বি-দলে জ্বলে উঠে জ্যোতি।

কিছুতেই পরনারী পরদ্রব্য হরণ করা যাবেনা, যদি আমরা পরনারী পরদ্রব্য রুপ শুক্র হরণ করে কামনদীতে মৃত্যু বরণ করি, যতবার মৃত্যু বরণ করবো, ১০ মাস পর পুনর্জন্ম রুপ আবার আমরা জন্মগ্রহণ করবো। যতক্ষণ একজন মানুষ গুরুর দীক্ষা নিয়ে নিজের শুক্রনিয়ন্ত্রণ করতে না পারবে, সে বার বার পরনারী পরদ্রব্য হরণ করবে আর বারবার জন্ম লাভ করবে, কিছুতেই তার আত্মার মুক্তি হবেনা। তাই সাঁইজি বললেন- পরদ্রব্য পরনারী হরণ করো না, পারে যেতে পারবে না, যতবার করিবে হরণ, ততবার হবে জনম।
সাঁইজির বানীতে অসংখ্য মানুষের কথা বলা হয়েছে- ভাবের মানুষ, মনের মানুষ, প্রেমের মানুষ, রসের মানুষ, সরল মানুষ, উবুদ মানুষ, আপন মানুষ। আমরা যারা লালনপ্রেমী সাধু, প্রায় প্রত্যেকে বিশ্বাস করি, লালন জাত পাতের উর্ধে উঠে মানুষের জয়গান গেয়ে গেছেন, সেই মানুষের খোঁজে আমরা ঘুরে বেড়াই দেশ হতে দেশান্তর, মসজিদ, মন্দির, উপাসনালয়, মাজার বাজার হাটে ঘাটে, জাগরণে স্বপ্নে, দেখায় না দেখায়, ঘুরি বেড়াই মক্কা মদিনা, গয়া কাশি বৃন্দাবন। তীর্থে তীর্থে চাতকের মতো আমাদের পদচারনা বিশ্বের পথ থেকে প্রান্তরে। অথচ দেহনামক একটি সার্বজনীন বিশ্বের খোঁজ নিলাম না জনমভর, যারে আকাশে পাতালে খুঁজি, সে যে আমার মাঝেই বসবাস করে একবারও তার খোঁজ নিলাম না, আমাদের মনের ভ্রান্তি ঘুরিয়ে মারলো বনে বনে, দিশাহীন এক ভ্রমণের অভিযাত্রী আমরা সবাই জানিনা সামনে কী, বুঝিনা করণ কার্য মানিনা অবধার্য- তাই লালন সাঁইজি বলছেন- লালন ফকির আসলে মিথ্যে, ঘুরে বেড়ায় তীর্থে তীর্থে,  সহি হলো না একমন দিতে, আসলেতে পড়ল কম।
আত্মদর্শন কোন ভাবের গোলাজল নয়, বিজ্ঞান আর আত্মদর্শন একে অপরের হাত ধরে চলে, বিজ্ঞান যেমন যুক্তি প্রমাণ আর বিশ্লেষণে আগ্রহী তেমনি আত্মদর্শনও নগদে বিশ্বাসী এখানে বাকীর কারবার বা লেনদেন নাই, যা সত্য, সুন্দর, সাবলীল আর অনুপম, যা মানুষের জন্য কল্যাণকর, যা মানুষকে তাঁর মূলে ধাবিত করে, সন্ধান দেয় পরম সত্যের তাই আত্মদর্শন, মানব দর্শন। পৃথিবীর সুপ্রাচীন কাল থেকে অধ্যাবধি কিম্বা আজ থেকে আরও কয়েকশ বছর পর, যতদিন যেখানে মানুষ থাকবে, সেখানেই আত্মদর্শন কার্যকর। আত্মদর্শন সর্বযুগে সব মানুষের জন্য একই রকম।
আত্মতত্ত্ব প্রেমী সকল সাধুদের কাছে সবিনয় নিবেদন, সেই মানুষের দর্শন পাবার জন্য, সেই মানুষের আবাস নিবাস সাধন ভজন পূজন সহ এসব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ তত্ত্বের গভীর হতে গভীরতম আলোচনা, ব্যাখ্যা, আর আত্মতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ প্রত্যেকের নিজ নিজ জ্ঞানগুরুও থেকেই জেনে বুঝে নেয়া উচিৎ।
অথবা  একজন আত্মতাত্ত্বিক দিব্যজ্ঞান সম্পন্ন পাকা সাধকগুরুর সান্নিধ্য নিয়েই সকল মানুষের আত্মদর্শনের জ্ঞান আহরণ করা বাঞ্ছনীয়।
তথ্যসুত্রঃ
লালিত লালন (১ম খণ্ড)
সংকলন»
  সম্পাদনা»  গবেষণা» 
কালের লিখন


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন